বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ একাধিক আন্তর্জাতিক
প্রতিষ্ঠান বলছে, বর্তমানে নতুন যেসব রোগ দেখা যাচ্ছে, তার ৭০ শতাংশ পশুপাখি থেকে আসছে।
সোয়াইন ফ্লু, বার্ড ফ্লু, নিপাহ ভাইরাস আসে পশুপাখি থেকে। মানুষ, প্রাণী ও প্রতিবেশের
ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ায় এসবের উৎপত্তি হচ্ছে। একই সঙ্গে মানুষ ও পশুপাখির ঘনবসতিপূর্ণ
এলাকায় এসব রোগের বিস্তার বেশি।
পোষা তোতা থেকে প্যারট ফিভার
সিটাকোসিস প্রতিরোধ করতে পাখির খাঁচা যতটা সম্ভব পরিষ্কার রাখুন, একটি খাঁচায় বেশি পাখি রাখা থেকে বিরত থাকুন এবং একটি খাঁচার মল ও অন্যান্য বর্জ্য যেন আরেকটি খাঁচায় না পড়ে
অনেকেই
আছেন যারা শখ করে বাড়িতে পাখি পোষেণ। এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয় যারা পাখির ব্যবসা
করেন। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না, ষাটেরও বেশি ঘাতক রোগ-জীবাণু ছড়ায় পাখির মল বা
বিষ্ঠা থেকে! এর মধ্যে পোষা তোতা অন্যতম। কর্নাটক ভেটেরিনারি, অ্যানিমেল অ্যান্ড
ফিশারিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, পাখির মল বা বিষ্ঠা থেকে নানা রকমের
রোগ-জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে। শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, কাশি, জ্বর ছাড়াও
নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস বা ‘সিটাকোসিস’ নামে এক ধরনের ফ্লু শরীরে বাসা বাঁধতে
পারে। সিটাকোসিস নামক ইনফেকশনটি প্যারট ফিভার নামেও পরিচিত। প্যারট ফিভার হলো
ক্ল্যামাইডিয়া সিটাসি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট ইনফেকশন। সংক্রমিত তোতা অথবা
এ ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন বহনকারী অন্যান্য পাখির শ্বাসপ্রশ্বাসীয় তরল বা মল লোকজন
শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করলে প্যারট ফিভার হতে পারে।
কুকুরের লালা থেকে র্যাবিস
র্যাবিসের শেষ পর্যায়ে হাইড্রোফোবিয়া বা পানি দেখলেই ভীতির সঞ্চার হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে উপসর্গ দেখা দিলেই ধরে নিতে হবে যে, বেঁচে থাকার আশা আর নেই
র্যাবিস
জীবাণু দ্বারা জলাতঙ্ক রোগের সৃষ্টি হয়। এটি একটি মারাত্মক রোগ। কুকুর বা শিয়াল
কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ মতে ভ্যাকসিন নেওয়া শুরু করলে ভয়ের কিছু
নেই। কুকুর, শিয়াল, বিড়াল, বানর, গরু, ছাগল, ইঁদুর, বেজি (নেউল), র্যাবিস জীবাণু
দ্বারা আক্রান্ত হলে এবং মানুষকে কামড়ালে এ রোগ হয়। এসব জীব-জানোয়ারের মুখের লালায়
র্যাবিস ভাইরাস জীবাণু থাকে। এ লালা পুরনো ক্ষতের বা দাঁত বসিয়ে দেওয়া ক্ষতের বা
সামান্য আঁচড়ের মাধ্যমে রক্তের সংস্পর্শে এলে রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং
জলাতঙ্ক রোগ সৃষ্টি হয়। তবে মনে রাখবেন কুকুরে কামড়ালেই জলাতঙ্ক রোগ হয় না।
যদি কুকুরটির বা কামড়ানো জীবটির লালায় র্যাবিস জীবাণু না থাকে। র্যাবিসের শেষ
পর্যায়ে হাইড্রোফোবিয়া বা পানি দেখলেই ভীতির সঞ্চার হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে উপসর্গ
দেখা দিলেই ধরে নিতে হবে যে, বেঁচে থাকার আশা আর নেই।
অ্যাকুরিয়ামের মাছ থেকে ইনফেকশন
ফিশ ট্যাঙ্ক গ্রানুলোমা নিরাময় করতে অ্যান্টিবায়োটিকের একটি লম্বা কোর্স প্রয়োজন হতে পারে, যদিও সম্পূর্ণরূপে নিরাময় হতে দুই বছর পর্যন্ত লাগতে পারে
অ্যাকুরিয়ামে
আমরা অনেকেই মাছ পালন করে থাকি। ঘরে সৌন্দর্যবর্ধনেও অ্যাকুরিয়ামের ব্যবহার
সর্বত্র। কিন্তু এ অ্যাকুরিয়ামের মাছ থেকেও হতে পারে ভয়ঙ্কর চর্ম রোগ। একে বলা হয়
ফিশ ট্যাঙ্ক গ্রানুলোমা। এটি হলো একটি বিরল স্কিন ইনফেকশন, যা সাধারণত সেসব লোকের
হয়ে থাকে যারা মাছের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসেন। আমেরিকান অস্টিওপ্যাথিক কলেজ অব
ডার্মাটোলজি অনুসারে ডা. বার্ড সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ‘মাইকোব্যারিয়াম মেরিনাম দ্বারা ফিশ
ট্যাঙ্ক গ্রানুলোমা বিকশিত হয়। এটি সেসব লোকের হাতে লাল স্ফীত ক্ষত নিয়ে আবির্ভূত
হয়, যারা হাতে অ্যাকুরিয়ামের মাছ ধরেন অথবা অ্যাকুরিয়াম পরিষ্কার করেন।’ অ্যাকুরিয়াম ওয়ার্কার যারা তারা এবং
অ্যাকুরিয়ামের মাছ অথবা অ্যাকুরিয়ামের সংস্পর্শে আসা যে কেউ এ রোগে আক্রান্ত হতে
পারে। এ রোগের ফলে হাতে যন্ত্রণাদায়ক ক্ষত বিকশিত হতে পারে। ফিশ ট্যাঙ্ক
গ্রানুলোমা নিরাময় করতে দীর্ঘ চিকিৎসার প্রয়োজন। সম্পূর্ণরূপে নিরাময় হতে
দুই বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
বিড়াল থেকে টক্সো প্লাসমোসিস
দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের লোকেরা এ রোগে তীব্রভাবে ভুগতে পারে। উপসর্গের মধ্যে ক্লান্তি, মাংসপেশি ব্যথা, মাথাব্যথা ও জ্বর অন্তর্ভুক্ত যা এক মাসেরও বেশি সময় থাকতে পারে
আমরা
অনেকেই বাসায় বিড়াল পুষে থাকি। এ ছাড়াও বাসাবাড়ির আশপাশে বিড়াল বসবাস করে। কিন্তু
বিড়াল থেকে মানুষের দেহে ছড়াতে পারে রোগ। টক্সোপ্লাসমোসিস ও বার্টোনেলা উভয়টাই
বিড়াল দ্বারা ছড়ায়। তবে রোগ দুটি ভিন্ন অণুজীব দ্বারা সৃষ্টি হয়। টক্সোপ্লাসমা
গোন্ডি নামক পরজীবী দ্বারা টক্সোপ্লাসমোসিস বিকশিত হয়। সংক্রমিত বিড়ালের মল বা
মূত্রের মাধ্যমে মানুষের মাঝে এ ইনফেকশন ছড়াতে পারে। তাই পোষা বিড়ালের মলমূত্র
পরিষ্কার করার সময় সাবধান থাকতে হবে যেন তা কখনই শরীরের স্পর্শে না আসতে পারে।
সংবাদমাধ্যমে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ নিধি জিলদয়াল বলেন, ‘সাধারণত এ রোগটি তেমন তীব্র নয়, কিন্তু
এটি কিছু মানুষের ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে। গর্ভবতী নারী, কেমোথেরাপির রোগী
অথবা দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের লোকেরা এ রোগে তীব্রভাবে ভুগতে পারে। উপসর্গের মধ্যে
ক্লান্তি, মাংসপেশি ব্যথা, মাথাব্যথা ও জ্বর অন্তর্ভুক্ত যা এক মাসেরও বেশি সময়
থাকতে পারে।’
0 comments: