Showing posts with label বিড়ালের ক্ষতিকর দিক. Show all posts
Showing posts with label বিড়ালের ক্ষতিকর দিক. Show all posts

Sunday, January 30, 2022

পশুপাখি থেকে মানুষের মধ্যে যেসব রোগ ছড়ায় (প্রথম পর্ব)

পশুপাখি থেকে মানুষের মধ্যে যেসব রোগ ছড়ায় (প্রথম পর্ব)





পশুপাখি থেকে যেসব রোগ ছড়ায় তাদেরকে জুনোটিক রোগ বলে। এ ধরনের রোগ বিস্ময়করভাবে কমন। আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের মতে, মানুষের মধ্যে ছড়ানো প্রতি ১০টি পরিচিত সংক্রামক রোগের মধ্যে প্রায় ৬টি রোগ ছড়ায় পশুপাখি থেকে। সাধারণত সংক্রমিত পশু বা পশুর মল থেকে জুনোটিক রোগ ছড়ায়, কিন্তু কখনো কখনো দূষিত খাবার খাওয়ার কারণেও এসব রোগ হতে পারে। সবচেয়ে কুখ্যত জুনোটিক রোগ হলো র‍্যাবিস বা জলাতঙ্ক। পশুপাখি থেকে মানুষের মাঝে ছড়াতে পারে এমন ১১ রোগ নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

* বিড়ালের কামড় বা আঁচড়ে ক্যাট স্ক্র্যাচ ফিভার হতে পারে

বার্টোনেলা ইনফেকশনকে ক্যাট স্ক্র্যাচ ফিভারও বলে। বার্টোনেলা হেলসিলে নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এই ইনফেকশন হয়। এটি সাধারণত বিড়ালের কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। এই ইনফেকশনের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে ক্ষতস্থানে শুষ্ক রক্তের শক্ত আবরণ বা পুঁজ, কিন্তু আরো মারাত্মক উপসর্গও বিকশিত হতে পারে। এনওয়াইইউ হেলথের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ থেরেসা এম. ফিয়োরিটো বলেন, এই ইনফেকশনটি সাধারণত সেলফ-লিমিটেড বা নিজে নিজে সেরে ওঠে, কিন্তু আপনার লসিকাগ্রন্থি ফুলে যেতে পারে অথবা স্পষ্ট কারণ ছাড়া জ্বর আসতে পারে। দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের লোকদের, বিশেষ করে অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের মারাত্মক জটিলতা হতে পারে, যেমন- এটি রক্তপ্রবাহ বা পরিপাকতন্ত্র বা হৃদপিণ্ডে ছড়াতে পারে। বিড়ালছানার মধ্যে বার্টোনেলা সবচেয়ে কমন। অধিকাংশ বিড়ালের আঁচড় ইনফেকশনে রূপ নেয় না এবং এর চিকিৎসা হলো অ্যান্টিবায়োটিকের একটি সাধারণ কোর্স। বিরলক্ষেত্রে চোখের ইনফেকশন, তীব্র মাংসপেশি ব্যথা অথবা মস্তিষ্কে ফোলা হতে পারে।

* গরু, ছাগল, ভেড়া ও হরিণ থেকে অ্যানথ্রাক্স ছড়াতে পারে

বায়োটেরোরিজমের সঙ্গে অ্যানথ্রাক্সের সম্পৃক্ততা সবচেয়ে বেশি হলেও প্রকৃতপক্ষে এ বিরল রোগটি ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়ে থাকে এবং এটি গৃহপালিত পশু ও বন্যপ্রাণী উভয় দ্বারা ছড়াতে পারে। লোকজন অ্যানথ্রাক্স স্পোরে শ্বাসগ্রহণ করলে অথবা দূষিত খাবার খেলে অথবা আক্রান্ত পশুর ছেঁড়া ত্বকের সংস্পর্শে আসলে অ্যানথ্রাক্সে সংক্রমিত হয়। কে কিভাবে এ রোগে সংক্রমিত হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে উপসর্গ ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো কালো বৃত্তসহ ফোস্কা বা ক্ষত, জ্বর, মাথাব্যথা, বমিবমি ভাব, শরীরে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, কনফিউশন ও গেলার সময় ব্যথা। চিকিৎসার মধ্যে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিটক্সিন বা উভয়ই অন্তর্ভুক্ত। অ্যানথ্রাক্স হলো একটি মারাত্মক দশা যা প্রাণনাশক হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, গরু, ভেড়া, ছাগল ও হরিণ হলো প্রাণী-সংক্রামক অ্যানথ্রাক্সের সর্বাধিক কমন উৎস। যারা প্রাণী বা প্রাণীজ প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করেন তাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি, যদিও এটি এখনো বিরল।

* বিড়াল থেকে টক্সোপ্লাসমোসিস ছড়াতে পারে

কখনো কখনো টক্সোপ্লাসমোসিসকে বার্টোনেলা ভেবে বিভ্রান্ত হতে হয়, কিন্তু উভয়টাই বিড়াল দ্বারা ছড়ায়, যা ভিন্ন অণুজীব দ্বারা সৃষ্টি হয়। টক্সোপ্লাসমা গোন্ডি নামক পরজীবী দ্বারা টক্সোপ্লাসমোসিস বিকশিত হয়। সংক্রমিত বিড়ালের মল বা মূত্রের মাধ্যমে মানুষের মাঝে এই ইনফেকশন ছড়াতে পারে। এই পরজীবী সুরক্ষিত ত্বকের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করতে পারে না, তাই সাধারণত মুখ বা উন্মুক্ত ক্ষতের মাধ্যমে এ ইনফেকশন ছড়ায়। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ নিধি জিলদয়াল বলেন, সাধারণত এ রোগটি তেমন তীব্র নয়, কিন্তু এটি কিছু মানুষের ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে। গর্ভবতী নারী, কেমোথেরাপির রোগী অথবা দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের লোকেরা এ রোগে তীব্রভাবে ভুগতে পারে। উপসর্গের মধ্যে ক্লান্তি, মাংসপেশি ব্যথা, মাথাব্যথা ও জ্বর অন্তর্ভুক্ত যা একমাসেরও বেশি সময় থাকতে পারে। স্বাস্থ্যবান লোকদের ক্ষেত্রে এ ইনফেকশন চিকিৎসা ছাড়াই কয়েক মাসের মধ্যে সেরে ওঠে। কিন্তু তীব্র টক্সোপ্লাসমোসিস মস্তিষ্ক, চোখ ও অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। এ ইনফেকশন কিছু বছর পর পুনরায় সক্রিয় হতে পারে। টক্সোপ্লাসমোসিস থেকে রক্ষা পেতে ডা. কার্লসন লিটার বক্স পরিষ্কার করতে এবং বিড়ালের মল পরিষ্কারের সময় সবসময় গ্লাভস ও ক্লিনিং অ্যাজেন্ট ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। মাটিও সংক্রমিত হতে পারে, তাই আপনার বাগানে বিড়ালের আনাগোনা থাকলে বাগানে কাজ করার সময় গ্লাভস পরুন।

পশুপাখি থেকে প্রাণঘাতী রোগ

পশুপাখি থেকে প্রাণঘাতী রোগ





বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বলছে, বর্তমানে নতুন যেসব রোগ দেখা যাচ্ছে, তার ৭০ শতাংশ পশুপাখি থেকে আসছে। সোয়াইন ফ্লু, বার্ড ফ্লু, নিপাহ ভাইরাস আসে পশুপাখি থেকে। মানুষ, প্রাণী ও প্রতিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ায় এসবের উৎপত্তি হচ্ছে। একই সঙ্গে মানুষ ও পশুপাখির ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এসব রোগের বিস্তার বেশি। 

পোষা তোতা থেকে প্যারট ফিভার

সিটাকোসিস প্রতিরোধ করতে পাখির খাঁচা যতটা সম্ভব পরিষ্কার রাখুন, একটি খাঁচায় বেশি পাখি রাখা থেকে বিরত থাকুন এবং একটি খাঁচার মল  অন্যান্য বর্জ্য যেন আরেকটি খাঁচায় না পড়ে

অনেকেই আছেন যারা শখ করে বাড়িতে পাখি পোষেণ। এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয় যারা পাখির ব্যবসা করেন। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না, ষাটেরও বেশি ঘাতক রোগ-জীবাণু ছড়ায় পাখির মল বা বিষ্ঠা থেকে! এর মধ্যে পোষা তোতা অন্যতম। কর্নাটক ভেটেরিনারি, অ্যানিমেল অ্যান্ড ফিশারিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, পাখির মল বা বিষ্ঠা থেকে নানা রকমের রোগ-জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে। শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, কাশি, জ্বর ছাড়াও নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস বা সিটাকোসিস নামে এক ধরনের ফ্লু শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। সিটাকোসিস নামক ইনফেকশনটি প্যারট ফিভার নামেও পরিচিত। প্যারট ফিভার হলো ক্ল্যামাইডিয়া সিটাসি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট ইনফেকশন।  সংক্রমিত তোতা অথবা এ ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন বহনকারী অন্যান্য পাখির শ্বাসপ্রশ্বাসীয় তরল বা মল লোকজন শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করলে প্যারট ফিভার হতে পারে।

 

কুকুরের লালা থেকে র‌্যাবিস

র‌্যাবিসের শেষ পর্যায়ে হাইড্রোফোবিয়া বা পানি দেখলেই ভীতির সঞ্চার হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে উপসর্গ দেখা দিলেই ধরে নিতে হবে যে, বেঁচে থাকার আশা আর নেই

র‌্যাবিস জীবাণু দ্বারা জলাতঙ্ক রোগের সৃষ্টি হয়। এটি একটি মারাত্মক রোগ। কুকুর বা শিয়াল কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ মতে ভ্যাকসিন নেওয়া শুরু করলে ভয়ের কিছু নেই। কুকুর, শিয়াল, বিড়াল, বানর, গরু, ছাগল, ইঁদুর, বেজি (নেউল), র‌্যাবিস জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে এবং মানুষকে কামড়ালে এ রোগ হয়। এসব জীব-জানোয়ারের মুখের লালায় র‌্যাবিস ভাইরাস জীবাণু থাকে। এ লালা পুরনো ক্ষতের বা দাঁত বসিয়ে দেওয়া ক্ষতের বা সামান্য আঁচড়ের মাধ্যমে রক্তের সংস্পর্শে এলে রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং জলাতঙ্ক রোগ সৃষ্টি হয়। তবে মনে রাখবেন কুকুরে কামড়ালেই জলাতঙ্ক রোগ হয় না।  যদি কুকুরটির বা কামড়ানো জীবটির লালায় র‌্যাবিস জীবাণু না থাকে। র‌্যাবিসের শেষ পর্যায়ে হাইড্রোফোবিয়া বা পানি দেখলেই ভীতির সঞ্চার হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে উপসর্গ দেখা দিলেই ধরে নিতে হবে যে, বেঁচে থাকার আশা আর নেই।

অ্যাকুরিয়ামের মাছ থেকে ইনফেকশন

ফিশ ট্যাঙ্ক গ্রানুলোমা নিরাময় করতে অ্যান্টিবায়োটিকের একটি লম্বা কোর্স প্রয়োজন হতে পারে, যদিও সম্পূর্ণরূপে নিরাময় হতে দুই বছর পর্যন্ত লাগতে পারে

অ্যাকুরিয়ামে আমরা অনেকেই মাছ পালন করে থাকি। ঘরে সৌন্দর্যবর্ধনেও অ্যাকুরিয়ামের ব্যবহার সর্বত্র। কিন্তু এ অ্যাকুরিয়ামের মাছ থেকেও হতে পারে ভয়ঙ্কর চর্ম রোগ। একে বলা হয় ফিশ ট্যাঙ্ক গ্রানুলোমা। এটি হলো একটি বিরল স্কিন ইনফেকশন, যা সাধারণত সেসব লোকের হয়ে থাকে যারা মাছের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসেন। আমেরিকান অস্টিওপ্যাথিক কলেজ অব ডার্মাটোলজি অনুসারে ডা. বার্ড সংবাদ মাধ্যমে বলেন, মাইকোব্যারিয়াম মেরিনাম দ্বারা ফিশ ট্যাঙ্ক গ্রানুলোমা বিকশিত হয়। এটি সেসব লোকের হাতে লাল স্ফীত ক্ষত নিয়ে আবির্ভূত হয়, যারা হাতে অ্যাকুরিয়ামের মাছ ধরেন অথবা অ্যাকুরিয়াম পরিষ্কার করেন। অ্যাকুরিয়াম ওয়ার্কার যারা তারা এবং অ্যাকুরিয়ামের মাছ অথবা অ্যাকুরিয়ামের সংস্পর্শে আসা যে কেউ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগের ফলে হাতে যন্ত্রণাদায়ক ক্ষত বিকশিত হতে পারে। ফিশ ট্যাঙ্ক গ্রানুলোমা নিরাময় করতে দীর্ঘ চিকিৎসার প্রয়োজন।  সম্পূর্ণরূপে নিরাময় হতে দুই বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

 

বিড়াল থেকে টক্সো প্লাসমোসিস

দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের লোকেরা  রোগে তীব্রভাবে ভুগতে পারে। উপসর্গের মধ্যে ক্লান্তি, মাংসপেশি ব্যথা, মাথাব্যথা  জ্বর অন্তর্ভুক্ত যা এক মাসেরও বেশি সময় থাকতে পারে

আমরা অনেকেই বাসায় বিড়াল পুষে থাকি। এ ছাড়াও বাসাবাড়ির আশপাশে বিড়াল বসবাস করে। কিন্তু বিড়াল থেকে মানুষের দেহে ছড়াতে পারে রোগ। টক্সোপ্লাসমোসিস ও বার্টোনেলা উভয়টাই বিড়াল দ্বারা ছড়ায়। তবে রোগ দুটি ভিন্ন অণুজীব দ্বারা সৃষ্টি হয়। টক্সোপ্লাসমা গোন্ডি নামক পরজীবী দ্বারা টক্সোপ্লাসমোসিস বিকশিত হয়। সংক্রমিত বিড়ালের মল বা মূত্রের মাধ্যমে মানুষের মাঝে এ ইনফেকশন ছড়াতে পারে। তাই পোষা বিড়ালের মলমূত্র পরিষ্কার করার সময় সাবধান থাকতে হবে যেন তা কখনই শরীরের স্পর্শে না আসতে পারে। সংবাদমাধ্যমে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ নিধি জিলদয়াল বলেন, সাধারণত এ রোগটি তেমন তীব্র নয়, কিন্তু এটি কিছু মানুষের ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে। গর্ভবতী নারী, কেমোথেরাপির রোগী অথবা দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের লোকেরা এ রোগে তীব্রভাবে ভুগতে পারে। উপসর্গের মধ্যে ক্লান্তি, মাংসপেশি ব্যথা, মাথাব্যথা ও জ্বর অন্তর্ভুক্ত যা এক মাসেরও বেশি সময় থাকতে পারে।