Latest Articles

Tuesday, December 13, 2022

মশা: ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ যে ৫ টি মশাবাহিত রোগ বাংলাদেশে ছড়ায়

মশা: ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ যে ৫ টি মশাবাহিত রোগ বাংলাদেশে ছড়ায়

সাইয়েদা আক্তার

বিবিসি বাংলা, ঢাকা

২০ অগাস্ট ২০২১

 

পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রজাতির মশা রয়েছে, এর মধ্যে মাত্র ১০০ টির মত প্রজাতি রোগ ছড়ায়।

এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে মশা থেকে ২০টির মত রোগ ছড়ায়।

পুরো পৃথিবীতে কীটপতঙ্গের আক্রমণে প্রতিবছর যত মানুষ মারা যান, তাদের মধ্যে মশাবাহিত রোগে মারা যান সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ।

মশাবাহিত রোগ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে প্রতিবছর ২০শে অগাস্ট পালিত হয় বিশ্ব মশা দিবস।

বাংলাদেশের মশা

কীটতত্ত্ববিদ এবং গবেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১২৩ প্রজাতির মশার খোঁজ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকাতেই ১৪টি প্রজাতির মশা পাওয়া যায়।

কীটতত্ত্ববিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বিবিসিকে বলেছেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মশাবাহিত পাঁচটি রোগের কথা জানা যায়।

এর মধ্যে রয়েছে ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং জাপানিজ এনসেফালাইটিস।

ম্যালেরিয়া

স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু ছড়ায়। বাংলাদেশে মোট ৩৬ প্রজাতির অ্যানোফিলিস মশা দেখা যায়, এদের মধ্যে সাতটি প্রজাতি বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া রোগ ছড়ায়।

অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেছেন, এই সাত প্রজাতির মধ্যে চারটি প্রজাতি ম্যালেরিয়ার প্রধান বাহক বাংলাদেশে।

এই মূহুর্তে বাংলাদেশের ১৩টি জেলার ৭২টি থানায় ম্যালেরিয়া রোগের উপস্থিতি রয়েছে। মূলত পার্বত্য ও সীমান্ত এলাকাতেই ম্যালেরিয়া বেশি দেখা যায়। এটি গ্রীষ্মকালে হয়।

২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৮৫ হাজার মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, মারা যান ১৫৪ জন। পরে এ সংখ্যা কমে আসে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আফসানা আলমগীর খান‌ বিবিসিকে বলেছেন, এখন ম্যালেরিয়া প্রকোপের ৯০ শতাংশের বেশি হয় দেশে তিন পার্বত্য জেলায়।

তিনি জানিয়েছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূলের পরিকল্পনা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাজ করছে।

ফাইলেরিয়া

কিউলেক্স মশার দুটি প্রজাতি এবং ম্যানসোনিয়া মশার একটি প্রজাতির মাধ্যমে বাংলাদেশে ফাইলেরিয়া রোগ ছডায়।

ফাইলেরিয়া রোগে মানুষের হাত-পা ও অন্যান্য অঙ্গ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ওঠে। একে স্থানীয়ভাবে গোদ রোগও বলা হয়।

বাংলাদেশের ৩৪টি জেলায় ফাইলেরিয়া আক্রান্ত রোগী দেখা যায়।

ডেঙ্গু

এডিস মশার দুইটি প্রজাতি- এডিস ইজিপ্টি এবং অ্যালবোপিকটাস, মূলত ডেঙ্গু ভাইরাসের জীবাণু ছড়ায়।

এডিস মশা পাত্রে জমা পরিষ্কার পানিতে জন্মায়। সাধারণত বর্ষাকালে এর ঘনত্ব বেশি হয়, ফলে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবও এ সময়ে বেড়ে যায়।

কিন্তু বাংলাদেশে চলতি বছর করোনাভাইরাস মহামারির পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ অনেকগুন বেড়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জানুয়ারি থেকে ১৭ই অগাস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৬,৬৫০ জন মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর ও সেই সঙ্গে সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়ে থাকে।

তীব্র পেটে ব্যথাও হতে পারে। শরীরে বিশেষ করে মাংসপেশীতে তীব্র ব্যথা হয়। জ্বরের ৪/৫ দিন পার হলে শরীরজুড়ে র‌্যাশ বা ঘামাচির মত লালচে দানা দেখা দেয়।

সাথে বমি ভাব, এমনকি বমিও হতে পারে।

ডেঙ্গু গুরুতর হলে রক্তে প্লাটিলেট কমে যায়, চোখের কোনা, দাঁতের মাড়ি বা নাক থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

ডা. আফসানা আলমগীর খান‌ বলেছেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রধাণ কারণ হচ্ছে আক্রান্ত হবার পর পরিস্থিতি খারাপ না হওয়া পর্যন্ত লোকে ডাক্তারের কাছে যায় না।

তিনি বলেন, লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা মাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সথে রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ খেয়াল রাখতে হবে।

চিকুনগুনিয়া

চিকুনগুনিয়া রোগও এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। ২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রথম চিকুনগুনিয়া ধরা পড়ে।

চিকুনগুনিয়া জ্বরের লক্ষণ সাধারণ ভাইরাল ফিভারের মত।

তবে মাথাব্যথা, বমি ভাব, দুর্বলতা, সর্দি-কাশি, এবং র‌্যাশের সঙ্গে শরীরে হাড়ের জয়েন্ট বা সংযোগস্থলে তীব্র ব্যথা হয়।

চিকুনগুনিয়া হলে অধিকাংশ সময় তিন থেকে চার দিনের মধ্যে জ্বর সেরে যায়। কিন্তু হাড়ের সংযোগস্থলগুলোতে হওয়া ব্যথা কারো কারো ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ভোগায়।

জাপানিজ এনসেফালাইটিস

অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলছেন, জাপানিজ এনসেফালাইটিস রোগটি কিউলেক্স মশার মাধ্যমে ছড়ায়।

১৯৭৭ সালে মধুপুর বন এলাকায় প্রথম জাপানিজ এনসেফালাইটিস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন।

এরপর বিভিন্ন সময়ে রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম এবং খুলনা অঞ্চলে এই রোগটি পাওয়া যায়।

অধ্যাপক বাশার বলছেন, বাংলাদেশে মশাবাহিত এই পাঁচ ধরণের রোগই মূলত দেখা যায়।

তবে কয়েক বছর আগে বাংলাদেশে জিকা ভাইরাস আক্রান্ত দুইজন রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন।

এরপর গত কয়েক বছরে আর জিকা ভাইরাস আক্রান্ত কাউকে শনাক্তের কথা শোনা যায়নি।

ফলে বাংলাদেশে এর অস্তিত্ব আছে বলে তিনি মনে করেন না।

কীভাবে মশাবাহিত রোগ থেকে সুস্থ থাকবেন

মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হবার আগেই সতর্ক হবার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ আক্রান্ত হবার পর সঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হলে মৃত্যুসহ নানা ধরণের জটিলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়

ডা. আফসানা আলমগীর খান এবং অধ্যাপক কবিরুল বাশারের পরামর্শ অনুযায়ী মশাবাহিত রোগ থেকে সুস্থ থাকার কয়েকটি উপায় বলছেন, যা এরকম

    • ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার এই দুইটি রোগের জন্যই দায়ী এডিস মশা সাধারণত সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার আগে এডিস কামড়ায়। ফলে এই দুই সময়ে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হবে
    • ঘুমানোর সময় মশারি খাটিয়ে ঘুমাতে হবে
    • বাড়ির ছাদে বা বারান্দার ফুলের টবে, নির্মাণাধীন ভবনে, বাতিল টায়ার কিংবা প্লাস্টিক কন্টেইনার- কোথাও যাতে তিন থেকে পাঁচদিনের বেশি পানি জমা না থাকে, সে ব্যবস্থা করতে হবে
    • মশার কামড় থেকে বাঁচতে নানা ধরণের রিপেলেন্ট অর্থাৎ মশা তাড়ানোর পণ্য যেমন বিভিন্ন ধরণের কয়েল, স্প্রে, ক্রিম জাতীয় পণ্য ব্যবহার করা, তবে এর মাত্রা ও প্রয়োগ সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।

এগুলো সবই মশাবাহিত কোন রোগে আক্রান্ত হবার আগের সতর্কতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরাণাপন্ন হয়ে চিকিসা নিতে হবে।

মশা তাড়ানোর প্রাকৃতিক পদ্ধতি

বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করেন মশা তাড়াতে কয়েল বা স্প্রে ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপায় চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।

তবে ঢাকায় মশার সংখ্যা যেভাবে বেড়েছে তাতে এসব কায়দা কতটা খাটবে সে আশংকাও রয়েছে।

অনেক বছর ধরে মশা তাড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে এমন কয়েকটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি নিচে বর্ণনা করা হলো:

    • নিমে মশা তাড়ানোর বিশেষ গুণ রয়েছে। প্রাচীনকালে মশা তাড়াতে নিমের তেল ব্যবহার করা হত। ত্বকে নিম তেল লাগিয়ে নিলে মশা ধারে-কাছেও ভিড়বে না বলে প্রচলিত।
    • বলা হয়ে থাকে মশা কর্পূরের গন্ধ সহ্য করতে পারে না। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে কর্পূর দিয়ে রাখলে মশা পালিয়ে যায়।
    • লেবু আর লবঙ্গ একসঙ্গে রেখে দিলে ঘরে মশা থাকে না বলে প্রচলিত আছে। এগুলো জানালায় রাখলে মশা ঘরে ঢুকতে পারবে না
    • ব্যবহৃত চা পাতা ফেলে না দিয়ে রোদে শুকিয়ে সেটা জ্বালালে চা পাতার ধোঁয়ায় ঘরের সব মশা-মাছি পালিয়ে যাবে। কিন্তু এতে শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি হবে না।

মশা নিয়ে কয়েকটি মজার তথ্য

    • একটি মশা সেকেন্ডে প্রায় ৩০০-৬০০ বার ডানা ঝাপটায়, মশা ওড়ার সময় এই ডানা ঝাপটানোর শব্দই শুনি আমরা
    • কেবলমাত্র স্ত্রী মশাই মানুষকে কামড়ায়, পুরুষ মশা নয়।
    • মশা ঘণ্টায় প্রায় দেড় মাইল বেগে উড়তে পারে
    • ডিম ফুটে বের হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই মশা মানুষকে কামড়ে রক্ত শুষে নেয়
    • মশা স্তন্যপায়ী প্রাণীকে কামড়ানোর পাশাপাশি পাখি ও সরীসৃপের শরীরেও হুল ফোটায়
    • মশা তার নিজের ওজনের তিনগুণ রক্ত শুষে নিতে পারে

 


Monday, December 12, 2022

International Dark Sky Week

International Dark Sky Week

 


International Dark Sky Week is held during the week of the new moon in April when people worldwide may turn off their lights to observe the beauty of the night sky without light pollution

The goals of the event are to:

1. Temporarily reduce light pollution and raise awareness about its effects on the night sky,

2. Encourage the use of better lighting systems that direct light downward instead of into the sky, and

3. Promote the study of astronomy.

This event always occurs in April, during the week of the new moon so that the sky can be as dark as possible for optimum viewing conditions.

Jennifer Barlow states, "The night sky is a gift of such tremendous beauty that should not be hidden under a blanket of wasted light. It should be visible so that future generations do not lose touch with the wonder of our universe." Barlow explains, "It is my wish that people see the night sky in all of its glory, without excess light in the sky as our ancestors saw it hundreds of years ago.

শিপ চর হলো বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের সদ্য জেগে ওঠা দ্বীপ

শিপ চর হলো বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের সদ্য জেগে ওঠা দ্বীপ


 


শিপ চর হলো বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের সদ্য জেগে ওঠা দ্বীপ । এর অবস্হান হলো পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার শেষ প্রান্ত হতে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরে । মানচিত্রে এর অবস্হান ২১.৭৮২২৯৪ ডিগ্রী অক্ষাংশএবং ৯০.৫৯২৯৫৩ ডিগ্রী দ্রাঘিমাংশ ।

Ship Island / শিপ চর হলো পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালি উপজেলার চর মন্তাজ ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত এলাকা হলেও এই দ্বীপ মাত্র কয়েক বছর হলো জেগে উঠেছে বলে জনবিরল । এখানে শুধুমাত্র জেলেরা মাছ ধরার সময় বিশ্রাম নেয় । এই দ্বীপে এখনো তেমন গাছপালা জন্মায়নি । এই দ্বীপে এখন ধানসি বা বুনো ধান বা ধানিঘাস জন্মাচ্ছে । ধানসি  এর বৈজ্ঞানিক নাম Porteresia coarctata (Roxb.) । এটা ধান জাতীয় উদ্ভিদ । ধানসি মূলের  মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করে ।অপর দিকে ধান গাছ বীজের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করে ।

এই ব্যতিক্রম ধর্মী উদ্ভিদ নতুন দ্বীপ বা চরে প্রথম দিকে জন্মায় এবং নতুন দ্বীপের মাটিকে শক্ত বা মজবুত করে যাতে মাটি পানি বা বাতাসের মাধ্যমে বিলীন না হয় । তারপর নতুন দ্বীপে উরি ঘাস জন্মায় । এর পর সুন্দর বনের শ্বাসমূল আছে এমন গাছ যেমন : সুন্দরী, গেওয়া, কেওড়া গাছ জন্মায় । এসব গাছ নতুন দ্বীপকে সমুদ্রে বিলীন হতে দেয় না । এসব গাছের পাতার লোভে কোন না কোনভাবে সুন্দর বনের প্রাণীরা এসব নতুন দ্বীপে এসে হাজির হয়ে বংশ বৃদ্ধি করে নতুন ইকোসিস্টেম বা পরিবেশ বৈচিত্র সৃষ্টি করে নতুন দ্বীপকে প্রান্তবন্ত করে তুলে ধরে ।

এই দ্বীপে যাওয়ার নিয়ম হলো :

১. ঢাকা হতে গলাচিপা উপজেলার শেষ প্রান্তের লঞ্চঘাটে যাওয়া ।

২.তারপর লঞ্চে করে চর মন্তাজ ইউনিয়নে যাওয়া ।

৩. চর মন্তাজে স্হানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও ফরেস্ট অফিস হতে সোনার চর দ্বীপ যাওয়ার অনুমিত নেওয়া ।

কারণ –

চরমন্তাজ হতে চর আন্ডা/আন্ডার চর দ্বীপ/ চর আন্ডা গ্রাম হয়ে সোনার চর যেতে হয় । সোনার চর হতে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরেই শিপ চর ।

সোনার চর হলো অভয়ারণ্য । এখানে সুন্দরবনের জীব জন্তু ছাড়া মানুষ থাকা নিষিদ্ধ । কারণ এটাকে ফরেস্ট অফিসের লোকরা পাহাড়া দেয় ।

সোনার চরের সমুদ্র সৈকত সেন্ট মার্টিন ও ছ্যাড়া দ্বীপের পর হলো বঙ্গোপসাগরের সর্বশেষ সমুদ্র সৈকত । এটা অবিকল সুন্দরবনের মতো । শুধু বাঘ নেই ।

 

৪. চরমন্তাজের শেষ সীমা পেরিয়ে চর আন্ডা / আন্ডার চর নাম দ্বীপে খেয়া নৌকায় করে যেতে হবে । চর আন্ডাতে একটা প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে । হাতে গোনা কয়েকটা পাকা বাড়ি আছে । এটা চরমন্তাজ ইউনিয়নের গ্রাম । লোক সংখ্যা ২ হাজারের মতো ।

চর আন্ডা/ আন্ডার চর দ্বীপ এলাকা হওয়ায় এখানে শহরের মতো তেমন কোন সুবিধা নেই । দ্বীপের বৈশিষ্ট্য অনেকটা সুন্দর বনের মতো । সুন্দরবনের গাছ এখানে রয়েছে । সুন্দরবন ও গ্রামের ছোঁয়া দুটোই এখানে পাওয়া যায় ।

৫. চর আন্ডা / আন্ডার চরের  দক্ষিণের শেষ সীমা হতে ট্রলারে করে সোনার চরের ঘাটে যেতে হবে । যেতে সময় লাগে ২ মিনিট ।  সেখানে বন কর্মকর্তাদের কাছ হতে অবস্হানের অনুমতি নিতে হবে । সোনার চরে রাতে থাকা নিষিদ্ধ ।

 

৬. সোনার চর সৈমুদ্র সৈকত হতে ১০ কিলোমিটার দূরে শিপ চরের অবস্হান । মানচিত্রে এর অবস্হান ২১.৭৮২২৯৪ ডিগ্রী অক্ষাংশএবং ৯০.৫৯২৯৫৩ ডিগ্রী দ্রাঘিমাংশ ।

সুতরাং ট্রলারে করে এই দ্বীপে যেতে হবে ।

শিপ চর-এর বৈশিষ্ট্য :

১. শিপ চর  একটা ফুটবল মাঠের সমান আয়তনের ছোট দ্বীপ। লম্বায় বড় জোড় ৩০০ ফুট ও পাশে ৩০০ ফুট । বাকি অংশ অধিকাংশ সময় বাকি অংশ সমুদ্রের পানির নিচে থাকে ।

২. দ্বীপটা দুইটা অংশে বিভক্ত । অনেকটা ধনুকের তীরের মতো দেখতে । মাঝে একটা অগভীর খাল আছে ।

৩. সামান্য কিছু ছোট গাছ  আছে ।

৪. শিপ চরের পর সমুদ্রে পটুয়াখালী জেলা বরাবর বাংলাদেশের আর মাটি নেই ।

৫.বিশ্রাম নেওয়ার জন্য তাবুর বসানোর পর ১০ ফুট দুরে সমুদ্রের জোয়ারের পানি দেখা যায় । সহজ কথা, এখানে আসলে চার দিকে পানি আর একটা গভীর শূণ্যতা অনুভব হয় ।

৬. শুয়ে থাকলে সমুদ্রের গর্জন কানে ধরা দেয় ।

৭. অভিজ্ঞ জেলেদের সাথে থেকে রাতে পূর্ণিমার জোছনার আলো উপভোগ করা যেতে পারে শিপ চরে কিছু সময় অবস্হান করে ।

৮. শীতকালে বঙ্গোপসাগরের চর বা দ্বীপ ভ্রমণ করা উত্তম হওয়ায় শিপ চরে শীত কালে ভ্রমণ করতে যেতে হয় ।

৯. সমুদ্রের রূপালী আভা, পূর্ণিমার জোছনা, হাল্কা হিম হিম বাতাস,ভোরের কুয়াশার চাঁদর, সকালের শিশির, সকাল ও বিকেলে একই সহানে সূয় উদয় ও অস্ত পর্যবেক্ষণ, রাতে পরিস্কার আকাশের নক্ষত্রমালা দেখা ও সমুদ্রের টেউয়ের ছোঁয়া পাওয়ার জন্য সর্বোত্তম স্হান হলো চর আন্ডা, সোনার চর ও শিপ চর ।

সাবধানতা –

 ১.ট্রলারের ইঞ্জিন নষ্ট হয় সে দিকে সতর্ক থাকতে হবে ।

২. সমুদ্রে ৩ নং বিপদ সংকেত থাকলে ভ্রমণ হতে বিরত থাকতে হবে ।

৩. ভ্রমণের জন্য লাইভ জ্যাকেট, তাবু ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ নূন্যতম ১০ কেজি বস্তু নেওয়ার মতো স্বাস্হ্য ও ধৈর্য্য রাখতে হবে ।

৪. স্হানীয় জনগণের সাথে সৌহার্দপূর্ণ ব্যবহার বজায় রাখতে হবে ।

৫. এসব দ্বীপ বা চরাঞ্চলের এর কাদামাটি খুব নরম হওয়ায় অনেক স্হানে কোমড় পরিমান ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।  সুতরাং সতর্ক থাকতে হবে ।

৬. শব্দ দূষণ করা যাবে না । ময়লা আবর্জনা যথাস্হানে ফেলতে হবে ।

 

 

আন্ডার চর, সোনার চর ও শিপ চর গবেষক ও  রোমাঞ্চপ্রিয়দের কাছে গুরুত্বপূর্ণ । কারণ:

১. এগুলো পরিবেশের জীবন্ত যাদুঘর ।

২. দ্বীপ কীভাবে গড়ে ওঠে ও  দ্বীপের জীব বৈচিত্র কীভাবে সৃষ্টি হয় তা জানা যায় ।

৩. বায়ু দূষণ ও আলোক দূষণ কম থাকায় মহাকাশ গবেষণা সহজতর হয় ।

৪. সমুদ্র বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করার উৎকৃষ্ট স্হান ।

৫. নেচার ফটোগ্রাফির জন্য উত্তম স্হান ।

৬.যাদের টেলিস্কোপ আছে ও ডিএসএলআর ক্যামেরা আছে তারা আকাশের গ্রহ নক্ষত্রের ছবি সুন্দরভাবে তুলে পারেন এখানে।

৭. রোমাঞ্চপ্রিয় ও ভ্রমণ প্রিয় লোকদের জন্য  উৎকৃষ্ট স্হান ।

 

 

জেনে রাখা ভাল:

১. শিপ চর যেখানে অবস্হিত সেখানে এক সময় বড় একটা জাহাজ ডুবে যায় । জাহাজের চার পাশে পলি জমে দ্বীপটি সৃষ্টি হয়েছে বলে দ্বীপটার নাম জেলেরা দেয় শিপ চর ।

২. আন্ডার চর ( অফিসিয়াল নাম চর আন্ডা ) নাম হওয়ার কারণ দ্বীপটা দেখতে ডিমের মতো ।

৩. চর মন্তাজ দ্বীপ/ ইউনিয়নের নাম হয়েছে জনৈক মন্তাজ নামক লোকের নাম অনুযায়ী ।

৪. সোনার চরের নাম সোনার চর হওয়ার কারণ হলো :

সোনার চরের সৈকতের বালিতে সূর্যের আলো যখন প্রতিফলিত হয় তখন সোনার চরের বালিকে সোনার মতই উজ্জ্বল মনে হয়। বলা যায় সূর্যের আলোতে রাঙ্গানো এক স্বর্ণময় বালুকাবেলা ।

 

উপসংহার :

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার শেষ সীমা হতে সমুদ্র পথে সোনার চরের দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার । সোনার চর হতে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে শিপ চর । এই ভ্রমণ পথের ৮০ কিলোমিটার অনেকটা নদীতে লঞ্চ ভ্রমণের মতো । নতুনদের জন্য  সোনার চর হতে শিপ চর সমুদ্র পথে ভ্রমণ অনেকটা বিপদ সংকুল । কারণ এই ভ্রমণপথটা সমুদ্রে । সোনার চরের আগের জলপথ হলো বিভিন্ন নদী ও চরের খাল দিয়ে লঞ্চ ভ্রমণ ।

যারা শিপ চর ভ্রমণ শেষে চর আন্ডা/ আন্ডার চরে পূর্ণিমায় রাত্রি যাপন করেছেন তারা জীবনের শ্রেষ্ঠতম আনন্দ উপভোগ করেছেন বলে তাদের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন ।

 

গবেষক ও রোমাঞ্চপ্রিয়বৃন্দ আছেন যারা এসব দ্বীপ নিয়ে জানতে আগ্রহী ও গবেষণা করতে আগ্রহী তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য অনুরোদ করছি ।