সিডনির অপেরা হাউসের ওপরে আকাশের মাঝে প্রায়শই একটি ঘটনা লক্ষ্য করা
যায়। রাতের বেলায় অপেরা হাউসের কৃত্রিম উজ্জ্বল আলোতে প্রলুব্ধ হয়ে অপেরা হাউসের
উপরে কিছু পাখি এদিক সেদিক উড়তে দেখা যায়।
হ্যাঁ, এরা
পথভ্রষ্ট পাখি। উজ্জ্বল আলোতে দিকভ্রান্ত হয়ে এরা নিজেদের বাসার রাস্তা হারিয়ে
ফেলে। ফলে এদিক সেদিক বিভ্রান্ত হয়ে উড়তে থাকে নির্দিষ্ট দিক খুঁজে পাবার জন্য।
কিন্তু পরিণতি টা মোটেও ভাল কিছু হয় না এসব পাখির জন্য।
একটানা দিকভ্রান্ত হয়ে উড়ার দরুন এরা প্রচণ্ড ক্লান্ত হয়ে পরে।
ক্লান্ত দেহ তাই আছড়ে পরে আশে পাশের কোন বিল্ডিং এর গায়ে কিংবা অপেরা হাউসের শক্ত
বহিরাবরণে। ফলাফল মৃত্যু।
অধিকাংশ সময়ই এই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত তাদের জীবন দিয়ে করতে হয়। এক
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর সিডনি র এই অপেরা হাউসের উজ্জ্বল আলোতে বিভ্রান্ত
হয়ে হাজার হাজার পাখি মৃত্যুবরণ করে।
তবে এমন ঘটনা শুধু যে এখানেই ঘটে
তা কিন্তু মোটেও নয়। আবার শুধু যে পাখির ক্ষেত্রেই এমন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় তাও
কিন্তু নয়। পৃথিবীর প্রতিটা প্রান্তে আলোক দূষণের অহরহ এমন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, যার
ভুক্তভোগী হচ্ছে পরিবেশের প্রতিটা উপাদান।
হতে পারে অন্যান্য দূষণের মত আলো দূষণ ব্যাপার টি আমাদের কাছে অতটা
পরিচিত নয়। এমনকি আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা এ বিষয়টির সাথে একদমই পরিচিত
নন, কিংবা পরিচিত থাকলেও আলোক দূষণ আদৌ কোন দূষণ কি না তা নিয়ে সন্দিহান।
তবে আমাদের জানা উচিত আলো দূষণ
কি? অন্যান্য দূষণ আমাদের পরিবেশ ও জীব জগতের যেমন ক্ষতি করে, আলোক দূষণেরও তেমনি
কোন ক্ষতিকর প্রভাব আছে কি না সে সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা আমাদের অর্জন করা
উচিত।
কাজেই, আজ আমরা দেখব কি এই আলো
দূষণ আর কিভাবে বা এটি হয়ে থাকে। সেই সাথে আমরা আরও দেখব আলো দূষণ আমাদের পরিবেশের
উপর কি কি প্রভাব ফেলছে।
আলো দূষণ
আলো দূষণ বুঝতে গেলে প্রথমে
আপনাকে একটি উদাহরণ বিবেচনা করতে হবে।
ধরুন, আপনার একটি বড় বাগান আছে।
সেই বাগানে আপনি বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগিয়েছেন। বিশাল একটি জায়গা জুড়ে আপনি তৈরি
করেছেন এই বাগান টি, যেখানে আপনি ফুলের গাছ থেকে শুরু করে ফলদ, ঔষধি সহ হরেক রকমের
গাছ লাগিয়েছেন। এবার সময় গড়ানোর সাথে সাথে আপনি একটি বিষয় লক্ষ করবেন। আপনি দেখবেন
যে আপনার বাগানে হরেক রকমের পাখি বাসা বেঁধেছে। কপাল ভাল হলে কাঠবিড়ালীর মত দু
একটা বন্য প্রাণীর দেখাও পেয়ে যেতে পারেন। সে যাই হোক, আসল কথা হল আপনি একটি
বাস্তুসংস্থান তৈরি করে ফেলেছেন।
সাধারণ ভাবে এতটুকু বিজ্ঞানের জ্ঞান যাদের আছে তারা ভাল করেই জানে যে
উদ্ভিদের যেমন দিনে সূর্যের আলোর প্রয়োজন আছে তেমনি রাতের আঁধারের দরকার ও আছে।
সালোকসংশ্লেষণের অন্ধকার পর্যায়, শ্বসন সহন উদ্ভিদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ
রাতের বেলা ঘটে থাকে। নির্দিষ্ট করে বললে অন্ধকারে।
এবার আপনি আপনার বাগান টিকে আরও
বেশি আকর্ষণীয় করার জন্য বাগানে ব্যাপক আলোকসজ্জা করলেন। ধরুন সারারাত বাগানের
শোভা বর্ধনের জন্য এই আলোকসজ্জা গুলো জ্বালিয়ে রাখেন।
তাহলে বলুন, আপনি কি কোন ধরনের পরিবেশ দূষণ মূলক কাজ এখানে করেছেন?
হ্যাঁ, করেছেন। কিভাবে? চলুন দেখে
নেওয়া যাক।
প্রথমেই বলেছি উদ্ভিদের অনেক
গুরুত্বপূর্ণ কাজ রাতের অন্ধকারে ঘটে থাকে। উজ্জ্বল আলোর উপস্থিতিতে এই কাজ গুল
ব্যাহত হয়। ফলে উদ্ভিদের বৃদ্ধি থেকে শুরু করে ফল দান সহ বিভিন্ন বিষয়ে এর প্রভাব
পরে।
এবার ভাবুন পাখিদের কথা। যেসব
পাখি আপনার বাগানে বাসা বেধেছিল তারা আলোকসজ্জার পরে তাদের বাসা খুঁজে পেতে
বিভ্রান্ত হবে। সবচেয়ে বড় কথা হল, একটা সময় গিয়ে দেখবেন আপনার বাগানে পাখির সংখ্যা
দিন দিন কমতে শুরু করেছে।
যদি কোন নিশাচর প্রাণী থেকে থাকে
তাহলে তারা রাতের বেলায় কৃত্রিম আলোয় শিকার করতে বের হবে না। ফলাফল হিসেবে কিছুদিন
পর এদের আর দেখতে পাবেন না।
খুব সামান্য কিছু উদাহরণ এখানে
বলা হল। এমন আরও অনেক পরিবর্তন আপনি দেখতে পাবেন। কিন্তু প্রায় সবই নেতিবাচক।
কেন? কারণ আপনি আলো দূষণ করেছেন।
কোন স্থানে প্রাকৃতিক আলো ব্যতীত অতিরিক্ত যে কোন কৃত্রিম আলোকসজ্জা
ই হল আলো দূষণ। International Dark-Sky Association এর মতে, কৃত্রিম আলোর
অনুপযুক্ত বা অতিরিক্ত ব্যবহার ই হল আলো দূষণ। খুব সামান্য আলো হয়ত পরিবেশের তেমন
ক্ষতি করে না, কিন্তু রাস্তাঘাটের উজ্জ্বল ল্যাম্পপোষ্ট, কোন বহুতল ভবনের বা বিশেষ
স্থানের আলোকসজ্জা ইত্যাদি, পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। আর একেই আমরা আলো
দূষণ বলি।
কৃত্রিম আলো বলতে প্রাকৃতিক আলো
(চাঁদ ও সূর্যের আলো) ব্যতীত যে কোন আলো কেই বুঝায়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত
বৈদ্যুতিক বাতি যার মধ্যে অন্যতম। রাতের বেলা বিভিন্ন প্রয়োজনে আমরা কৃত্রিম আলো
ব্যবহার করে থাকি। সভ্যতার শুরু থেকেই যা আমাদের নিত্য সঙ্গী। কিন্তু বৈদ্যুতিক
বাতি আবিষ্কারের পর থেকে এই ব্যবহার দিন দিন বেড়েছে ব্যাপক হারে। আমাদের নিত্য
দিনের ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের নানান ওয়াটের বাল্ব, টর্চ লাইট,স্ট্রিটল্যাম্প বিল
বোর্ড বা গাড়ির হেডলাইট থেকে । তাছাড়া কেরোসিন ও ডিজেল চালিত বিভিন্ন কৃত্রিম উৎস
তো আছেই ।
বিভিন্ন
প্রকার আলোক দূষণ এবং কারণ
পরিবেশে তিন ধরনের আলো দূষণ
রয়েছে এবং এসবের পেছনে রয়েছে বিভিন্ন কারণ। এগুলো হলঃ
১।
অতিরিক্ত উজ্জ্বলতাঃ এই
আলো দূষণটি ঘটে মূলত কৃত্রিম আলোক উৎসের অপব্যবহার এর ফলে। অপ্রয়োজনীয় এবং
অতিরিক্ত কৃত্রিম আলো কোন স্থানে অস্বাভাবিক উজ্জ্বলতা তৈরি করতে পারে। রাস্তাঘাটে
ব্যবহৃত ল্যাম্পপোষ্ট বা ফ্লাডলাইট, অপ্রয়োজনীয় আলোকসজ্জা প্রভৃতি কারণে একটি
স্থানের উজ্জ্বলতা বেড়ে গিয়ে ওই স্থানের স্বাভাবিক আলোর ভারসাম্য নষ্ট করে। যেমনঃ
যুক্তরাষ্ট্রের টাইমস স্কয়ারের মত স্থান।
২।
আলোক ঝলকানিঃ এটি
হল কৃত্রিম আলোর অতিরিক্ত ঝলকানি যা স্বাভাবিক দর্শনে অস্বস্তির কারণ হতে পারে
(উদাহরণস্বরূপ, গাড়ি চালানোর সময়)।
৩।
আলোক অনুপ্রবেশঃ এ
দূষণ টি হল যখন আলো এমন একটি এলাকায় প্রবেশ করে যেখানে এটি কোন প্রয়োজনে ব্যবহার
হয় না (যেমন রাস্তার আলো কাছাকাছি বেডরুমের জানালা আলোকিত করে)।
আলো
দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব
আলো দূষণের প্রভাব গুলো মোটেও
হালকা ভাবে নেওয়ার উপায় নেই। পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের উপর আলো দূষণের সরাসরি
প্রভাব রয়েছে। Nature Study Society of Bangladesh এর তথ্য অনুযায়ী চলুন দেখে
নেওয়া যাক আলো দূষণের কিছু ক্ষতিকর প্রভাব।
১। আলো দূষণ মানুষের ঘুমের উপর
সরাসরি প্রভাব ফেলে। আমাদের দেহে মেলাটোনিন নামক একটি হরমোন রয়েছে, যা কিনা সরাসরি
আমাদের ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। মূলত রাতের আঁধারে আমাদের দেহে এই হরমোন টি নিঃসৃত
হয়ে থাকে। এই হরমোন দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও প্রদাহ কমিয়ে দেয়। পর্যাপ্ত
পরিমাণের ঘুমের জন্য মেলাটোনিন নিঃসরণ প্রয়োজনে ।
কিন্তু আলো দূষণে মেলাটোনিন
নিঃসরণে ব্যাঘাত ঘটে। রাতের বেলায় আমরা যে কৃত্রিম আলো ব্যবহার করি বিশেষ করে নীল
আলোর এল ই ডি লাইটের উপস্থিতিতে মেলাটোনিন নিঃসরণ কমে যায়। ফলে ধীরে ধীরে আমাদের
ঘুমের সমস্যা শুরু হতে থাকে। অনিদ্রা, মাথাব্যথা, অবসাদ, চিন্তা, মানসিক অশান্তি
প্রভৃতি সমস্যা গুলো ক্রমান্বয়ে দেখা দিতে শুরু করে।
২। বর্তমানে স্তনক্যান্সার
নারীদের একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাধি। আর এই স্তনক্যান্সারের একটি অন্যতম কারণ হল
মেলাটোনিনের নিঃসরণ কমে যাওয়া। তাই কৃত্রিম আলোর আধিক্যতার কারণে স্তন ক্যান্সারের
ঝুঁকি বেড়ে যায়। ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনিস্টিউট ও ন্যাশনাল ইনিস্টিউট অফ
ইনভাইরনমেন্টাল হেলথ সার্ভিস এর এক জরীপে দেখানো হয় যে, রাতের কৃত্রিম আলো স্তন
ক্যান্সারের জন্য দায়ী। আর এ কারণে নাইট শিফট এ যে সকল নারীরা কাজ করেন তাদের
স্তনক্যান্সার এর ঝুঁকি বেশি থাকে।
৩। উদ্ভিদের খাদ্য তৈরি থেকে
বিভিন্ন শারীরবৃত্ত কাজের উপর সরাসরি আলো এবং অন্ধকারের উপস্থিতির প্রভাব থাকে।
আলো দূষণের কারণে রাতের বেলাতেও উদ্ভিদের স্টোমাটা সারারাত খোলা থাকছে। এতে করে
উদ্ভিদ তার প্রয়োজনীয় রস বাষ্প আকারে হারাচ্ছে। ফলে পাতা হয়ে পড়ছে বিবর্ণ।
৪। আমরা জানি যে বিভিন্ন মৌসুমী
উদ্ভিদের ফুল ও ফল দান দিন ও রাতের দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করে, সহজ কথায় আলো ও
অন্ধকারের স্থায়িত্বের উপর নির্ভর করে। কিন্তু আলো দূষণে কৃত্রিম আলোর পরিমাণ ও
উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ার ফলে অন্ধকার সময়ের দৈর্ঘ্য আর দিনের আলোর দৈর্ঘ্যের
পরিমাণের তারতম্য হচ্ছে। ফলে উদ্ভিদের ফুল ও ফল উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটছে।
৫। অনেক উদ্ভিদ আছে যাদের রাতের
বেলায় পরাগায়ন ঘটে। রাতের অন্ধকারে বিভিন্ন পতঙ্গরা ফুলে ফুলে ঘুরে পরাগায়ন করে
থাকে। কৃত্রিম আলোর উপস্থিতি এ সকল পতঙ্গদের রাতে চলাফেরার ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। যা
কিনা উদ্ভিদের পরাগায়নও কমিয়ে দিচ্ছে।
৬। রাস্তার ল্যাম্প পোস্ট-এ যে
আলো জ্বলে তা থেকে ক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের অতি বেগুনী রশ্মি বের হয়, যা ছোট
পোকামাকড় এর জিনগত পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। আলোর প্রভাবে কোষের ভিতরে ডিএনএ-এর
মধ্যে থাইমিন নামক যে যৌগ থাকে তা পরিবর্তন করে দেয়, যার ফলে ডিএনএ তে পরিবর্তন
আসে। এতে তাদের মৌলিক বৈশিষ্ট্য যেমন গায়ের রঙ চোখের রঙ ইত্যাদির পরিবর্তন আসতে
পারে। এমনকি প্রজনন ক্ষমতাও হ্রাস পায়।
৭। আমরা জানি যে জোনাকি পোকা
কিভাবে আলো জ্বেলে থাকে। তবে জোনাকি পোকা এই আলো কিন্তু এমনি এমনিই
জ্বালে না। এর পেছনে রয়েছে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্দেশ্য, তা হল বংশ বিস্তার।
জোনাকি পোকা আলো জ্বেলে বিপরীত লিঙ্গের জোনাকিদের আকর্ষণ করে বা বিপরীত লিঙ্গের
আবেদনে সারা দেয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে অধিক হারে আলোক দূষণ জোনাকি পোকার
বংশবিস্তারের এই প্রক্রিয়া কে বাধাগ্রস্ত করেছে। রাতের বেলায় কৃত্রিম আলোর প্রভাবে
তাদের তৈরি আলো সঙ্গীর কাছে পৌঁছাতে পারছে না। ফলে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে জোনাকির
প্রজননের হার এবং তাদের সংখ্যা।
৮। সামুদ্রিক কচ্ছপের উপর আলোক
দূষণের প্রভাব আরও মারাত্মক। সামুদ্রিক কচ্ছপরা অধিকাংশ সময় সমুদ্রে থাকলেও
প্রজননের সময়ে সমুদ্র পাড়ে ডিম পাড়তে আসে। যখন রাতের বেলায় ডিম ফুটে বাচ্চা
বের হয় চাঁদের আলোয় রাতের আকাশের উজ্জ্বলতা আর সমুদ্রের অন্ধকারাচ্ছন্নতার উপর
নির্ভর করে বাচ্চা কচ্ছপ সমুদ্রের দিক নির্ণয় করে। কৃত্রিম আলোর আকর্ষণে ভুল পথে
চলে আসে বাচ্চা কচ্ছপ। ফলে কোনোদিন সমুদ্রের দেখা পায় না, মারা যাচ্ছে অনেক
কচ্ছপের বাচ্চা।
বাসা বাধা কিংবা ডিমপাড়ার জন্য
মা কচ্ছপ অন্ধকারময় তীরে আসে, আলোকিত জায়গা এড়িয়ে চলে। যে সকল সমুদ্রতীরে
কৃত্রিম আলো বা শহর রয়েছে সেসব সমুদ্রতীরে কচ্ছপরা বাসা বাধতে ও ডিম পাড়তে
বাঁধাগ্রস্ত হয়।
৯। পাখিদের উপরে আলো দূষণের
ক্ষতিকর প্রভাব শুরুতেই কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। তবে এটুকুই শেষ নয়। মার্কিন পাখি
বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন গবেষণা চালিয়ে দেখতে পান যে আলোর প্রভাবে উত্তর আমেরিকায়
প্রায় ২০০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি তাদের গতিপথ পরিবর্তন এনেছে। বিশ্বব্যাপী ৫৬
প্রজাতির Petrel পাখি আলো দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাদের ব্যবহার ও বৈচিত্র্যের
পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।
১০। উভচর এবং সরীসৃপ দের মাঝেও
আলোদূষণের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। কিছু প্রজাতির ব্যাঙ ও সালামান্ডার আলোর উপর
নির্ভর করে দিকনির্ণয় করে চলাচল করে। অন্ধকারে কৃত্রিম আলো মেলাটোনিন নিঃসৃত
হওয়ার পরিমাণের উপর প্রভাব ফেলে। মেলাটোনিন এক প্রকার আলোকসংবেদনশীল হরমোন যা
প্রাণীর আচার-আচরণ এর উপর ভূমিকা থাকে। এ ছাড়াও এসব প্রাণী গভীর রাতে কিংবা ভোরের
দিকে শিকারে বের হয়। কৃত্রিম আলোর ফলে এদের শিকার ব্যাহত হয়। তা ছাড়াও কৃত্রিম
আলো চোখের রেটিনার ক্ষতি, স্পার্ম উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া এমনকি জেনেটিক মিউটেশনও
ঘটাতে পারে।
১১। সমুদ্রের নীচে বসবাসকারী
অনেক প্রাণী কৃত্রিম আলো দ্বারা প্রভাবিত হয়। বেশিরভাগ মাছ ই সাদা আলো এড়িয়ে
চলে। Menai Strait এ এক জরিপ থেকে দেখা যায় যে গুগলি জাতীয় শামুক (barnacle)
জাহাজ বা বন্দর থেকে ভেসে আসা কৃত্রিম আলো দ্বারা আকর্ষিত হয়। যা প্রায় ৩০৩
মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের ক্ষতিসাধন করে থাকে।
১২। ক্ষুদ্রাকৃতির প্রাণী
জুপ্লাংটন দিনের বেলায় পানির গভীর স্তরে থাকে, রাতের বেলা উপরের স্তরে উঠে আসে
এলজি খাওয়ার জন্য। কৃত্রিম আলোর উপস্থিতি উপরের স্তরে উঠে আসতে বাধা গ্রস্ত করে,
অন্যদিকে এলজির সংখ্যা বহুগুনে বেড়ে যায়, ফলে জলজ পরিবেশ ভারসাম্য হারায়।
সামুদ্রিক কোরাল অমাবস্যা পূর্ণিমার উপর নির্ভর করে ডিম দেয়। যদি চাঁদের আলো
কৃত্রিম আলো দ্বারা প্রভাবিত হয়, তাহলে সঠিক সময়ে ডিম দিতে পারে না, ফলে বংশ
বিস্তার ব্যাহত হয়।
বেশিরভাগ শহরে এখন আর পরিস্কার আকাশেও ভালভাবে তারা দেখা যায় না। আলো
দূষণের কারণে রাতের বেলাতেও উজ্জ্বল হয়ে থাকছে আমাদের বায়ুমণ্ডল। এমন উজ্জ্বল আলোর
আভায় আকাশের অনিন্দ্য সৌন্দর্য্যের খুব সামান্যই আমরা উপভোগ করতে পারছি। শহুরে
অনেক শিশুরই মিল্কিওয়ে দেখার সৌভাগ্য হয় না বা হবে না।
আলো দূষণকে আমরা যতটা হালকাভাবে
দেখি এটি ততটা এড়িয়ে যাওয়ার মত বিষয় নয়। এর প্রভাব গুলো কিছুটা ধীর গতির হওয়ায়
আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অতটা গুরুত্বের সাথে নেই না। কিন্তু ক্ষতিকর প্রভাবের দিক
দিয়ে এটি কোন অংশেই অন্যান্য দূষণের দিক দিয়ে কম নয়। আমরা সচেতন না হলে অদূর
ভবিষ্যতে অনেক ভয়াবহ বিপদে সম্মুখীন হতে হবে।