Monday, December 12, 2022
Sunday, January 30, 2022
পশুপাখি থেকে মানুষের মধ্যে যেসব রোগ ছড়ায় (প্রথম পর্ব)
পশুপাখি থেকে যেসব রোগ ছড়ায় তাদেরকে জুনোটিক রোগ বলে। এ ধরনের রোগ বিস্ময়করভাবে কমন। আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের মতে, মানুষের মধ্যে ছড়ানো প্রতি ১০টি পরিচিত সংক্রামক রোগের মধ্যে প্রায় ৬টি রোগ ছড়ায় পশুপাখি থেকে। সাধারণত সংক্রমিত পশু বা পশুর মল থেকে জুনোটিক রোগ ছড়ায়, কিন্তু কখনো কখনো দূষিত খাবার খাওয়ার কারণেও এসব রোগ হতে পারে। সবচেয়ে কুখ্যত জুনোটিক রোগ হলো র্যাবিস বা জলাতঙ্ক। পশুপাখি থেকে মানুষের মাঝে ছড়াতে পারে এমন ১১ রোগ নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।
* বিড়ালের কামড় বা আঁচড়ে ক্যাট স্ক্র্যাচ
ফিভার হতে পারে
বার্টোনেলা
ইনফেকশনকে ক্যাট স্ক্র্যাচ ফিভারও বলে। বার্টোনেলা হেলসিলে নামক ব্যাকটেরিয়া
দ্বারা এই ইনফেকশন হয়। এটি সাধারণত বিড়ালের কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে
ছড়ায়। এই ইনফেকশনের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে ক্ষতস্থানে শুষ্ক রক্তের শক্ত
আবরণ বা পুঁজ, কিন্তু আরো মারাত্মক উপসর্গও বিকশিত হতে পারে। এনওয়াইইউ হেলথের
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ থেরেসা এম. ফিয়োরিটো বলেন, ‘এই ইনফেকশনটি সাধারণত সেলফ-লিমিটেড বা নিজে নিজে সেরে ওঠে, কিন্তু
আপনার লসিকাগ্রন্থি ফুলে যেতে পারে অথবা স্পষ্ট কারণ ছাড়া জ্বর আসতে পারে। দুর্বল
ইমিউন সিস্টেমের লোকদের, বিশেষ করে অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের মারাত্মক জটিলতা হতে
পারে, যেমন- এটি রক্তপ্রবাহ বা পরিপাকতন্ত্র বা হৃদপিণ্ডে ছড়াতে পারে।’ বিড়ালছানার মধ্যে বার্টোনেলা সবচেয়ে
কমন। অধিকাংশ বিড়ালের আঁচড় ইনফেকশনে রূপ নেয় না এবং এর চিকিৎসা হলো
অ্যান্টিবায়োটিকের একটি সাধারণ কোর্স। বিরলক্ষেত্রে চোখের ইনফেকশন, তীব্র মাংসপেশি
ব্যথা অথবা মস্তিষ্কে ফোলা হতে পারে।
* গরু, ছাগল, ভেড়া ও হরিণ থেকে
অ্যানথ্রাক্স ছড়াতে পারে
বায়োটেরোরিজমের
সঙ্গে অ্যানথ্রাক্সের সম্পৃক্ততা সবচেয়ে বেশি হলেও প্রকৃতপক্ষে এ বিরল রোগটি
ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়ে থাকে এবং এটি গৃহপালিত পশু ও
বন্যপ্রাণী উভয় দ্বারা ছড়াতে পারে। লোকজন অ্যানথ্রাক্স স্পোরে শ্বাসগ্রহণ করলে
অথবা দূষিত খাবার খেলে অথবা আক্রান্ত পশুর ছেঁড়া ত্বকের সংস্পর্শে আসলে
অ্যানথ্রাক্সে সংক্রমিত হয়। কে কিভাবে এ রোগে সংক্রমিত হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে
উপসর্গ ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো কালো বৃত্তসহ ফোস্কা বা
ক্ষত, জ্বর, মাথাব্যথা, বমিবমি ভাব, শরীরে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, কনফিউশন ও গেলার সময়
ব্যথা। চিকিৎসার মধ্যে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিটক্সিন বা উভয়ই
অন্তর্ভুক্ত। অ্যানথ্রাক্স হলো একটি মারাত্মক দশা যা প্রাণনাশক হতে পারে। বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, গরু, ভেড়া, ছাগল ও হরিণ হলো প্রাণী-সংক্রামক অ্যানথ্রাক্সের
সর্বাধিক কমন উৎস। যারা প্রাণী বা প্রাণীজ প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করেন তাদের এ রোগে
আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি, যদিও এটি এখনো বিরল।
* বিড়াল থেকে টক্সোপ্লাসমোসিস
ছড়াতে পারে
কখনো কখনো টক্সোপ্লাসমোসিসকে বার্টোনেলা ভেবে বিভ্রান্ত হতে হয়, কিন্তু উভয়টাই বিড়াল দ্বারা ছড়ায়, যা ভিন্ন অণুজীব দ্বারা সৃষ্টি হয়। টক্সোপ্লাসমা গোন্ডি নামক পরজীবী দ্বারা টক্সোপ্লাসমোসিস বিকশিত হয়। সংক্রমিত বিড়ালের মল বা মূত্রের মাধ্যমে মানুষের মাঝে এই ইনফেকশন ছড়াতে পারে। এই পরজীবী সুরক্ষিত ত্বকের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করতে পারে না, তাই সাধারণত মুখ বা উন্মুক্ত ক্ষতের মাধ্যমে এ ইনফেকশন ছড়ায়। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ নিধি জিলদয়াল বলেন, ‘সাধারণত এ রোগটি তেমন তীব্র নয়, কিন্তু এটি কিছু মানুষের ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে। গর্ভবতী নারী, কেমোথেরাপির রোগী অথবা দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের লোকেরা এ রোগে তীব্রভাবে ভুগতে পারে। উপসর্গের মধ্যে ক্লান্তি, মাংসপেশি ব্যথা, মাথাব্যথা ও জ্বর অন্তর্ভুক্ত যা একমাসেরও বেশি সময় থাকতে পারে।’ স্বাস্থ্যবান লোকদের ক্ষেত্রে এ ইনফেকশন চিকিৎসা ছাড়াই কয়েক মাসের মধ্যে সেরে ওঠে। কিন্তু তীব্র টক্সোপ্লাসমোসিস মস্তিষ্ক, চোখ ও অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। এ ইনফেকশন কিছু বছর পর পুনরায় সক্রিয় হতে পারে। টক্সোপ্লাসমোসিস থেকে রক্ষা পেতে ডা. কার্লসন লিটার বক্স পরিষ্কার করতে এবং বিড়ালের মল পরিষ্কারের সময় সবসময় গ্লাভস ও ক্লিনিং অ্যাজেন্ট ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। মাটিও সংক্রমিত হতে পারে, তাই আপনার বাগানে বিড়ালের আনাগোনা থাকলে বাগানে কাজ করার সময় গ্লাভস পরুন।
Saturday, January 29, 2022
বাড়িতে পোষা কুকুর, বিড়াল আছে? জানেন নিজের কী ক্ষতি করছেন?
রোগ ধরা পড়ছিল না কিছুতেই। শুধু প্রচণ্ড জ্বর। শেষে নিউমোনিয়া হয়ে মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন শমীকবাবু। বহু ডাক্তার দেখিয়েও অসুখের কারণ অনুসন্ধান করা যাচ্ছিল না। শেষে একদিন রোগীর বাড়ির সদস্যদের ব্যাপারে খোঁজ করে জানা গেল, স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে আর পোষ্য টিয়া নিয়ে সংসার ৩৯ বছরের শমীকবাবুর। তখনই মনে খটকা লাগে ডাক্তারবাবুর। অসুখটা সিটাকোসিস নয় তো? পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ঠিক সেটাই ধরা পড়ল।
শুধু পোষা কুকুর, বিড়াল, মুরগি, ছাগল, গরু কেন! খরগোশ, ঘোড়া এমনকী টিয়া, ময়নার মতো রকমারি পাখি কিংবা অ্যাকোরারিয়ামে থাকা রংবেরঙের মাছের জন্য জটিল অসুখে আক্রান্ত হতে পারেন মনিব ও তাঁর পরিবার।
বাড়ির সদস্যদের মনের অনেকটা জায়গা জুড়ে থাকে। আবেগের অংশীদার হয়ে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে গৃহপালিত পশু-পাখি বাড়ির একজন সদস্য হয়ে ওঠে। আর অনেকেই পোষ্যর সঙ্গে মেশার সময় প্রাথমিক সাবধানতাও অবলম্বন করতে চান না। খানিকটা সচেতনতার অভাবে এই সব নিরীহ জীব থেকে কত বড় রোগ সংক্রমিত হতে পারে তা ভুলে যান। কেউ পোষ্যের সামান্য কামড়ানো বা আঁচড়ানোকে তোয়াক্কা করেন না। ফলে অজান্তে মারাত্মক রোগের কবলে পড়তে হয় প্রভুকে।
শুধু পোষা কুকুর, বিড়াল, মুরগি, ছাগল, গরু কেন! খরগোশ, ঘোড়া এমনকী টিয়া, ময়নার মতো রকমারি পাখি কিংবা অ্যাকোরারিয়ামে থাকা রংবেরঙের মাছের জন্য জটিল অসুখে আক্রান্ত হতে পারেন মনিব ও তাঁর পরিবার।
বাড়ির সদস্যদের মনের অনেকটা জায়গা জুড়ে থাকে। আবেগের অংশীদার হয়ে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে গৃহপালিত পশু-পাখি বাড়ির একজন সদস্য হয়ে ওঠে। আর অনেকেই পোষ্যর সঙ্গে মেশার সময় প্রাথমিক সাবধানতাও অবলম্বন করতে চান না। খানিকটা সচেতনতার অভাবে এই সব নিরীহ জীব থেকে কত বড় রোগ সংক্রমিত হতে পারে তা ভুলে যান। কেউ পোষ্যের সামান্য কামড়ানো বা আঁচড়ানোকে তোয়াক্কা করেন না। ফলে অজান্তে মারাত্মক রোগের কবলে পড়তে হয় প্রভুকে।
প্রোটোজোয়া বাহিত রোগ
১. জিয়ারডিয়া ইনফেকশন- গবাদি পশুর মল, মূত্র থেকে জিয়ারডিয়া প্রোটোজোয়া রোগ ছড়ায়। এই ইনফেকশনের ফলে পেটে ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া, ডাইরিয়া ও কলেরা হতে পারে।
২. টোক্সোপ্লাসমোসিস- বিড়ালের মল, মূত্র থেকে হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে এবং বয়স্কদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের এই রোগ হলে বিপদ।
৩. ফাংগাস বাহিত রোগ- গৃহপালিত পশুর থেকে ফাংগাস বাহিত রোগ দাদ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, ত্বকে গোলাকৃতি ইনফেকশন হয়।
৪. পরজীবী বাহিত রোগ- প্রধানত ইকাইনোকক্কাস গ্র্যানুলস পরজীবীর কারণে হয় যা কুকুরের ক্ষুদ্রান্ত্রে থাকে। এই পরজীবীর দ্বারা সংক্রামিত কোনও কুকুরের মলের সংস্পর্শে এলে মানুষের শরীরে এই রোগটি হয়। এর ফলে লিভার ও অন্য অঙ্গে সিস্ট হতে পারে।
৫. ভাইরাস বাহিত রোগ- জলাতঙ্ক-কুকুর কামড়ালে বা আঁচড়ালে জলাতঙ্ক হয়। ক্ষত কতটা তার উপর ভ্যাকসিন ও ইমুনোগ্লোবিউলিনের প্রয়োজন হয়। চিকিৎসা না করলে মৃত্যু হতে পারে।
সাবধান
- গৃহপালিতর থাকার জায়গা মল, মূত্র ভালভাবে পরিষ্কার করুন। গৃহপালিত কামড়ে বা আঁচড়ে দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- পরিচর্যার সময় গ্লাভস, বুট-জুতো, অ্যাপ্রন, চশমা ব্যবহার করুন।
- গৃহপালিতকে নিয়মিত ভ্যাকসিন দিতে হবে। অসুস্থ হলে পশু চিকিৎসককে দেখান।
বিড়াল পোষা বিপদজনক!
বিজ্ঞানীরা এমন একটি পরজীবী জীবাণু খুঁজে পেয়েছেন যা থেকে মানুষ সিজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার ডিসঅর্ডারের মতো রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আশঙ্কার বিষয় হলো বেশির ভাগ বিড়ালের শরীরেই এই জীবাণু থাকতে পারে। ফলে পোষা বিড়ালের কাছ থেকেই এমন মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে শিশু-কিশোরদের। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে পিটিআই এ খবর জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানলি মেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা শৈশবে বিড়াল পোষার সঙ্গে সিজোফ্রেনিয়ার যোগসূত্র নিয়ে আগের কিছু গবেষণার তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করেন। এতে দেখা গেছে শৈশবে বিড়াল পোষার অভ্যাস ছিল এমন ছেলে-মেয়েদের মধ্যে পরবর্তী জীবনে মানসিক রোগ দেখা দেওয়ার ঝুঁকি থাকে।
গবেষকেরা বলছেন,‘তিনটি আলাদা গবেষণায় দেখা গেছে, শৈশবে বাড়িতে বিড়াল পোষার রীতি ছিল এমন পরিবারের ছেলে-মেয়েদের পরবর্তী জীবনে সিজোফ্রেনিয়া বা অন্য মানসিক রোগে আক্রান্ত হতে বেশি দেখা যায়।’ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে সিজোফ্রেনিয়া বুলেটিনে।
‘টক্সোপ্লাজমা গনডি’ নামের এই পরজীবী জীবাণুটি প্রায় সব বিড়ালের শরীরেই বাসা বাঁধতে পারে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে টেক টাইমস। মানুষের মধ্যে সহজে এই ‘টক্সোপ্লাজমা গনডি’ জীবাণুর উপসর্গগুলো ধরা পড়ে না বলে প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগ শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে।
স্ট্যানলি মেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক ই ফুলার টোরি এই গবেষণার প্রেক্ষিতে বিড়াল পোষার বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। পোষা বিড়ালকে বাড়ির মধ্যেই আবদ্ধ রাখার চেষ্টা করা, বিড়ালের পরিচ্ছন্নতায় মনোযোগ বাড়ানো এবং বিড়ালের থাকার জায়গা বা বিড়ালের খেলার বালির বাক্স ব্যবহারের সময়টুকু ছাড়া বাকি সময় ঢেকে রাখলে ‘টক্সোপ্লাজমা গনডি’ জীবাণুর বিস্তার রোধ করা যেতে পারে।