Showing posts with label জীব বৈচিত্র. Show all posts
Showing posts with label জীব বৈচিত্র. Show all posts

Monday, January 31, 2022

পরিবেশ দূষনের নানা দিক

পরিবেশ দূষনের নানা দিক




পরিবেশ সভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সভ্যতার ক্রমবিকাশ থেকেই মানুষ গড়ে তুলেছে তার পরিবেশ । পরিবেশকে রুদ্ধ করে পরিবেশকে জয় করার চিন্তা ভাবনার যেন শেষ নেই। মানুষ নিজেদের স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে যেভাবে পরিবেশের উপর আঘাত হানছে তাতে পরিবেশ তার নিজস্ব আচরণে গোটা বিশ্বকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারছে। আমরা নিজেরাই এর জন্য দায়ী নিজেরাই নিজেদের পরিবেশকে ধ্বংস করে মহাবিপদ ডেকে নিয়ে আসছি। আর তার জন্য উন্নত বিশ্ব সবচেয়ে দায়ী। অপরিকল্পিত নগরায়ন শিল্পায়ন গড়ে তোলায় দূষিত হচ্ছে সুস্থ পরিবেশ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের জলে ও স্থলে মহাশূন্যে আধিপত্য বিস্তার। কিন্তু মানুষের এ বিজয় মানুষকে পরাজয়ের মধ্যে ফেলে দিল। আজ আমরা এক ভয়ংকর সংকটের মুখোমুখি। কোন বিশেষ জাতি কিংবা কোন দেশের একার নয়। এই সংকট আজ বিশ্ব জুড়ে পৃথিবীর পরিবেশ নানাভাবে দূষিত হচ্ছে দিনের পর দিন। এ দূষণ পৃথিবীর পরিবেশকে নিয়ে যাচ্ছে ভয়ংকর ভবিষ্যতের দিকে। আজ জলে বিষ বাতাসে আতঙ্ক, মাটিতে মহাত্রাস।

মানুষের দৈনন্দিন কর্মকান্ডে সৃষ্ট ক্ষতিকর পদার্থ ও তা নির্গমনের কারণে স্বাভাবিক পরিবেশের উপর প্রভাব পড়লে তাকে দূষণ বলে। পরিবেশ দূষণ বিভিন্নভাবে হয়ে থাকে। বায়ু দূষণ, পানিদূষণ, শব্দ দূষণ এরমধ্যে অন্যতম। আমরা এত দিন দূষণ শব্দটি শুনে এসেছি, কিন্তু এর মধ্যে আছে পরিবেশের হাহাকার। পরিবেশ যত দূষণ হবে ঠিক ততই প্রতিশোধ নেবে মানব তথা সমগ্র জীবকুলের উপর। এখন আমাদের অবস্থা এমন পর্যায়ে পরেছে আমরা যদি সঠিক পথে না চলি তা হলে ভবিষ্যতের যে কুফল পরবে তার জন্য দায়ি হবে সুধুই মানুষ, আর কুফল ভোগ সমগ্র জীবকুল।

বিগত বছরে ৭৬ টির বেশি প্রজাতির প্রাণী এবং কয়েকশ প্রজাতির গাছপালা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমাদের অথনৈতিক উন্নতি হয়েছে।এর পরিনামে বাতাসে প্রতিবছর ২০ কোটি মেট্রিক টন কার্বন মনোক্সাইড সঞ্চিত হচ্ছে। বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। প্রতিবছর ৬০ হেক্ট্রর জমি মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। প্রতি মিনিটে বালুকাকীর্ণ হয়ে পড়ছে ৪ হেক্ট্রর উর্বর ভূমি। এখনও বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই। দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। পাহাড় কাটা, ফসলি জমি ধ্বংস বনাঞ্চল উজাড় করে পরিবেশের উপর মারাত্মক আঘাত হানছে। একটি দেশে ২৫% বনভূমি থাকার কথা। সেখানে বাংলাদেশে বনভূমি রয়েছে মাত্র ১৬%।

বাংলাদেশে যত্রতত্রভাবে গড়ে উঠছে শিল্প কারখানা। প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে নদীর পানি, চলছে নির্বিচারে পাহাড় কাটাঁ, ফসলি জমি ধ্বংস। বনাঞ্চল উজাড় করে পরিবেশকে প্রতিনিয়ত দূষিত করে চলেছে। বাংলাদেশে যেভাবে নদী দূষণ শুরু হয়েছে তাতে অচিরেই নানা দুর্যোগের মুখোমুখি হবে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। নদীর পানি ব্যবহার অনুপযোগী। ভূগর্ভস্থ পানির উপর অতি নির্ভরশীলতার কারণে ইতোমধ্যে সারা দেশে সুমিষ্ট জলের অভাব দেখা দিয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারে ভূগর্ভস্থ পানির লেভেল ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হচ্ছে ঘরবাড়ি বহুতল ভবন। অন্যদিকে মাটি কাটার কবলে ধ্বংস হচ্ছে ফসলি জমি। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয়েও বাড়ছে দূষণের মাত্র। দেশের নদী দখলে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের হাত থাকায় ফলে দূষণ ও দখল নিয়নন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এমন প্রতিবেদন পত্রপত্রিকায় বহুবার প্রকাশিত হয়েছে । দেশের অধিকাংশ তরল বর্জ্যে উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানে নেই বর্জ্যে পরিশোধন (ইটিপি)। ফলে তরল বর্জ্যে দূষিত হয়ে পড়ছে নদীর পানি । পরিবেশ দূষণের মাত্রার পরিণতির কথা বিবেচনা করে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা পরিবেশ দূষণ মুক্ত রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্বের স্বার্থে পরিবেশ দূষণ মুক্ত রাখা দরকার। এ দূষণ রোধ করার জন্য জণগনকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। সকলকে পরিবেশ দূষণ রোধে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে।

এসব দূষণ এর সবগুলো সম্পর্কে হয়তো আমরা অনেকেই কম জানি –

  • বায়ু দূষণ
  • পানি দূষণ
  • মৃত্তিকা দূষণ
  • আবর্জনা দূষণ
  • তেজষ্ক্রিয় দূষণ
  • শব্দ দূষণ
  • আলোক দূষণ
  • দৃশ্য দূষণ
  • তাপ দূষণ

চাষের জমি ভরাট হয়ে নগরায়ন হচ্ছে, উন্মুক্ত সমুদ্র সৈকত বন্দী হচ্ছে চিংড়ী চাষের কারণে, পাহাড় কেটে গড়ে উঠছে বস্তি, অল্প যা কিছু কল-কারখানা আছে তার অশোধিত বর্জ্যে বিষাক্ত হয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন নদী নালা। জীবন সংগ্রামের এই অস্থির কষাঘাতে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাপে প্রকৃতি হচ্ছে নিষ্পেষিত, শোষিত ও দলিত। ক্ষুদ্র আয়তনের আমাদের এই দেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃতি তথা পরিবেশ সংরক্ষণ ও পরিচালনা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাঁচা মরার সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কযুক্ত। বাস ট্রাক , লরি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া যত্রতত্র মুড়ির টিন, বাড়ি ঘরের ময়লা স্তূপের কারণে নদীপথে মান্দাতার আমলে লঞ্চ ষ্টীমার চলাচলের কারণে, স্যালো নৌকার আবির্ভাবের জন্য যেখানে সেখানে পরিবেশ দূষণকারী বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষণ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করেছে। বিশ্বের সর্বাধিক বায়ু দূষিত ১৫টি শহরের ১৩টি হলো এশিয়ায়। এই দূষণ এশিয়ায় বছরে ১০ লাখ লোকের মৃত্যুর কারণ।। আমরা সর্বদাই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবদ্ধির জন্য নিবেদিত। কিন্তু উন্নয়নের কেন্দ্র বিন্দু পরিবেশকে পাশ কাটিয়ে পরিবেশের উপর একছত্রভাবে জুলুম করে পক্ষান্তরে উন্নয়নের চাকাটির চলার পথই রুদ্ধ করছি। আজ তাই এহেন দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের সময় এসেছে। । শহর নগর এলাকা নির্মাণ বা সম্প্রসারণ, রাস্তাঘাট নির্মাণ ইত্যাদি কারণে এর ফলে নালা, ড্রেন ইত্যাদি মাটি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে এবং জমাট পানি উপচে পড়ে বিভিন্ন সমস্যার কারণ ঘটাচ্ছে। তাছাড়া পাহাড় কাটার কারণে স্থানে স্থানে ধস নামছে। সে পাহাড়গুলিসহ আশ পাশের পাহাড়গুলি ভংগুর হয়ে যাওয়ায় এদের স্থায়িত্ব হুমকির সম্মুখীন। পাশাপাশি নৈসর্গিক সৌন্দর্য বিনষ্ট হচ্ছে, তা বন্য প্রাণীর অস্তিত্ব লোপ পাচ্ছে এবং জৈব বৈচিত্র বিলুপ্তির শেষ পর্যায়ে উপনীত হচ্ছে পানি চলাচল তথা ঢালুতে পানি নামায় যে প্রাকৃতিক নালাগুলি ছিল, সেগুলির অধিকাংশই ভরাট হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে।

ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন বিশেষতঃ বাস ট্রাক থেকে নিঃসৃত কালো ধোঁয়া বায়ু দূষণ ঘটায়। তাই ত্রুটিমুক্ত যানবাহনের মান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও ত্রুটিপূর্ণ যানগুলো বাতিল করার মাধ্যমে বায়ু দূষণ কমানো সম্ভব। যানজট কমানোর জন্য গণ পরিবহনের আবশ্যকতা রয়েছে। ট্রাফিক জ্যাম এবং সড়কের উপর যত্রতত্র যানবাহনের কারণে বায়ু দূষণ বৃদ্ধি পায়। জনস্বাস্থ্যের পর বায়ু দূষণের সরাসরি নেতিবাচক প্রভাবের সৃষ্টির ব্যাপারটি অনস্বীকার্য। শব্দ দূষণ শব্দ দূষণের কারণে মানুষের দৈনন্দিন জীবন দুঃসহ হয়ে পরেছে। বিভিন্ন পরিবহনের অনবরত বাজানো হর্ণ মানুষের শ্রবণেন্দ্রীয়কে করে তুলেছে অতিষ্ঠ। একটি সুস্থ মানুষের স্বাভাবিক শ্রবণ ক্ষমতা ৪৫ ডেসিবল গাড়ির হর্ণের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে, হাইড্রলিক হর্ণ, ১৯৯৭ সালে তা আমদানি এবং বিক্রি বেআইনী ঘোষণা করা হলেও আজ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। চিকিৎসকদের মতে উচ্চ গ্রামের প্রতিদিন ৪০ সেকেন্ড করে শব্দ গ্রহণ করবে কিছু দিনের মধ্যেই শ্রবণ যন্ত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। উচ্চ শব্দ মানবদেহের জন্য বিশেষ ক্ষতির কারণ। পানি দূষণে আমরা পানিকে দূষিত করে তুলছি প্রতিনিয়ত।

শিল্পজাত বর্জ্য গার্হস্থ্য বর্জ্য ইত্যাদি নদীর পানিকে ক্রমশ দূষিত করে তুলছে। নদীর তীরে গড়ে উঠেছে শিল্প কারখানা, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ইত্যাদি আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নদীর বর্জ্য পদার্থ পরিত্যাগস্থল হিসাবে ব্যবহার করা হয়। সমুদ্র দূষিত হয়ে পড়ছে লোকালয়ে আবর্জনা কীটনাশক রাসায়নিক পদার্থ, তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য পদার্থ, সমুদ্রগামী জাহাজ, সামুদ্রিক তেলখনির তেল নিঃসরনের কারণে সমস্ত বর্জ্য সমুদ্রে মাছের ডিম পাড়া সামুদ্রিক প্রাণী উদ্ভিদের দৃপ্তি ও বিকাশের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে বিবিধ বর্জ্যের কারণে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা হ্রা্‌স পাওয়ায় সামুদ্রিক প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়ে। বর্জ পরিবেশ দূষণে ক্ষতিকর পরিবেশ সংর্‌ক্ষণ আইন-১৯৯৫ এর আওতায় ১৯৯৭ সালে সরকার ঘোষিত কারকারখানার নির্গত ময়লা পানি ও বর্জ্য নির্গমনের গুণগতমান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়টি নিশ্চিত করে পরিবেশেগত ছাড়পত্র কোন শিল্প প্রকল্পের অনুমোদন প্রক্রিয়ার একটি অংশ একথা উল্লেখ করে সুপারিশ করা হয়েছে শিল্প কারখানার কঠিন তরল ও বায়বীয় বর্জ্য ফেলার যথাযোগ্য স্থান নির্ধারণ এবং এগুলো কঠোরভাবে কার্যকর করার জন্য পরিবেশ আদালত স্থাপন, পলিথিনব্যাগ পচনশীল না হওয়ায় সহজে বিনষ্ট হয় না। পয়ঃপ্রণালীর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে পরিবেশের মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করে। কঠিন বর্জ্য পদার্থ যেমন – বোতল, টিনের ক্যান, কাঁচ বা কাগজের সামগ্রী, রিসাইক্লিং এবং আবর্জনাকে সারের বর্জ্যকে রিসাইকল্‌ড কাগজে, বর্জ্য প্লাষ্টিককে বার্নিশের কাজে ব্যবহৃত নতুন রঞ্জক ও ডাবের খোসাকে জ্বালানিতে পরিণত করার প্রযুক্তিকে উৎসাহিত করা। মেডিকেল বর্জ্য ফেলার যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ছাড়া কো্‌ন এলাকায় হাসপাতাল বা ক্লিনিকের নির্মাণের স্থান নির্দিষ্ট করতে না দেওয়া। উপযুক্ত পরিবহণ ব্যবস্থা আবর্জনা ফেলার নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি পর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন, মল নিষ্কাশন ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পরিবেশ সহায়ক প্রযুক্তির ব্যবহার চালূ করা. অপর্যাপ্ত পয়ঃনিষ্কাশন ও পয়ঃনালা ব্যবস্থা আবর্জনা সংগ্রহ ব্যবস্থায় জটিলতা রয়েছে। আমাদেরকে এখন উন্নয়ন পরিবেশের সংঘাতের আবর্তে হোচট খেয়ে চলতে হচ্ছে। গোটাবিশ্ব আজ পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিঘ্ন। কারণ সুন্দর, দূষণমুক্ত পরিবেশ বিশ্বে প্রতিটি মানুষেরই কাম্য দ্রুত নগরায়ন ও শিল্পায়ন পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে পরিবেশ দূষণের মাত্রা যেভাবে দিন দিন বেড়ে চলছে তাতে করে অদূর ভবিষতেই পৃথিবী মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে। বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। বিধিবিধান এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ দ্বারা উন্নত দেশগুলি তাদের পরিবেশ রক্ষা করছে। এদের মতো চলুন আমরাও চেষ্টা করি। একটু সচেতন হলে পরিবশটা রক্ষা করা খুব্‌ সহজ কাজ। বস্তুত বিগত কয়েক বছর দেশে পরিবেশগত সমস্যা যেমন প্রকট হয়েছে সাথে সাথে পরিবেশ বিষয়ে মানুষের আগ্রহও সচেতনতাও বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। উন্নয়ন কর্মী এবং নীতি নির্ধারকদের মধ্যে পরিবেশের বিভিন্ন বিষয় বর্তমানে ব্যাপক গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হচ্ছে ।

আমাদের সম্পর্কে

আমাদের সম্পর্কে


 


সমাধানের অংশ হোন, সমস্যার নয়।

AUBD(Asociation of Urban Biological Diversity হল জৈবিক বৈচিত্র্যের একটি কেন্দ্র, আমরা বিশ্বাস করি যে বাংলাদেশের নগরবাসীর কল্যাণ প্রকৃতির সাথে গভীরভাবে জড়িত বিশেষ করে সবুজ কাঠ এবং ধোঁয়া আলো দূষণ এবং ক্ষতিকারক প্রাণী থেকে মুক্ত। কারণ বৈচিত্র্যের অন্তর্নিহিত মূল্য রয়েছে, আমরা বিজ্ঞান, আইন এবং সৃজনশীল মিডিয়ার মাধ্যমে এটি করুন, ভূমি, জল এবং জলবায়ু রক্ষার উপর ফোকাস সহ যে প্রজাতির বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন। আমরা চাই যারা আমাদের পরে আসবে তারা এমন একটি পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হোক যেখানে বন্য এখনও বেঁচে আছে।

এই বার্ষিক গড় রিডিং 83.3 বাংলাদেশের সমস্ত শহরের মধ্যে ঢাকাকে 1 স্থানে রাখার জন্য যথেষ্ট ছিল (উল্লেখ্য যে দেশের দূষণ মাত্রার জন্য নিবন্ধিত একমাত্র শহর ছিল ঢাকা, তাই এই প্রথম স্থানের ্যাঙ্কিং অনিবার্য ছিল) পাশাপাশি 2019 সালে বিশ্বব্যাপী 21 তম সবচেয়ে দূষিত শহর, যা ঢাকার বায়ু দূষণের মাত্রাকে বেশ গুরুতর করে তুলেছে এবং এর নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

What YOU can do

Who we are

 

আলো দূষণ কি? প্রাণিজগতে আলো দূষনের ক্ষতিকর প্রভাব

আলো দূষণ কি? প্রাণিজগতে আলো দূষনের ক্ষতিকর প্রভাব

 




সিডনির অপেরা হাউসের ওপরে আকাশের মাঝে প্রায়শই একটি ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। রাতের বেলায় অপেরা হাউসের কৃত্রিম উজ্জ্বল আলোতে প্রলুব্ধ হয়ে অপেরা হাউসের উপরে কিছু পাখি এদিক সেদিক উড়তে দেখা যায়।

হ্যাঁ, এরা পথভ্রষ্ট পাখি। উজ্জ্বল আলোতে দিকভ্রান্ত হয়ে এরা নিজেদের বাসার রাস্তা হারিয়ে ফেলে। ফলে এদিক সেদিক বিভ্রান্ত হয়ে উড়তে থাকে নির্দিষ্ট দিক খুঁজে পাবার জন্য। কিন্তু পরিণতি টা মোটেও ভাল কিছু হয় না এসব পাখির জন্য।

একটানা দিকভ্রান্ত হয়ে উড়ার দরুন এরা প্রচণ্ড ক্লান্ত হয়ে পরে। ক্লান্ত দেহ তাই আছড়ে পরে আশে পাশের কোন বিল্ডিং এর গায়ে কিংবা অপেরা হাউসের শক্ত বহিরাবরণে। ফলাফল মৃত্যু।

অধিকাংশ সময়ই এই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত তাদের জীবন দিয়ে করতে হয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর সিডনি র এই অপেরা হাউসের উজ্জ্বল আলোতে বিভ্রান্ত হয়ে হাজার হাজার পাখি মৃত্যুবরণ করে।

তবে এমন ঘটনা শুধু যে এখানেই ঘটে তা কিন্তু মোটেও নয়। আবার শুধু যে পাখির ক্ষেত্রেই এমন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় তাও কিন্তু নয়। পৃথিবীর প্রতিটা প্রান্তে আলোক দূষণের অহরহ এমন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, যার ভুক্তভোগী হচ্ছে পরিবেশের প্রতিটা উপাদান।

হতে পারে অন্যান্য দূষণের মত আলো দূষণ ব্যাপার টি আমাদের কাছে অতটা পরিচিত নয়। এমনকি আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা এ বিষয়টির সাথে একদমই পরিচিত নন, কিংবা পরিচিত থাকলেও আলোক দূষণ আদৌ কোন দূষণ কি না তা নিয়ে সন্দিহান।

তবে আমাদের জানা উচিত আলো দূষণ কি? অন্যান্য দূষণ আমাদের পরিবেশ ও জীব জগতের যেমন ক্ষতি করে, আলোক দূষণেরও তেমনি কোন ক্ষতিকর প্রভাব আছে কি না সে সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা আমাদের অর্জন করা উচিত।

কাজেই, আজ আমরা দেখব কি এই আলো দূষণ আর কিভাবে বা এটি হয়ে থাকে। সেই সাথে আমরা আরও দেখব আলো দূষণ আমাদের পরিবেশের উপর কি কি প্রভাব ফেলছে।



আলো দূষণ

আলো দূষণ বুঝতে গেলে প্রথমে আপনাকে একটি উদাহরণ বিবেচনা করতে হবে।

ধরুন, আপনার একটি বড় বাগান আছে। সেই বাগানে আপনি বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগিয়েছেন। বিশাল একটি জায়গা জুড়ে আপনি তৈরি করেছেন এই বাগান টি, যেখানে আপনি ফুলের গাছ থেকে শুরু করে ফলদ, ঔষধি সহ হরেক রকমের গাছ লাগিয়েছেন। এবার সময় গড়ানোর সাথে সাথে আপনি একটি বিষয় লক্ষ করবেন। আপনি দেখবেন যে আপনার বাগানে হরেক রকমের পাখি বাসা বেঁধেছে। কপাল ভাল হলে কাঠবিড়ালীর মত দু একটা বন্য প্রাণীর দেখাও পেয়ে যেতে পারেন। সে যাই হোক, আসল কথা হল আপনি একটি  বাস্তুসংস্থান তৈরি করে ফেলেছেন।

সাধারণ ভাবে এতটুকু বিজ্ঞানের জ্ঞান যাদের আছে তারা ভাল করেই জানে যে উদ্ভিদের যেমন দিনে সূর্যের আলোর প্রয়োজন আছে তেমনি রাতের আঁধারের দরকার ও আছে। সালোকসংশ্লেষণের অন্ধকার পর্যায়, শ্বসন সহন উদ্ভিদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ রাতের বেলা ঘটে থাকে। নির্দিষ্ট করে বললে অন্ধকারে।

এবার আপনি আপনার বাগান টিকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করার জন্য বাগানে ব্যাপক আলোকসজ্জা করলেন। ধরুন সারারাত বাগানের শোভা বর্ধনের জন্য এই আলোকসজ্জা গুলো জ্বালিয়ে রাখেন।

তাহলে বলুন, আপনি কি কোন ধরনের পরিবেশ দূষণ মূলক কাজ এখানে করেছেন?

হ্যাঁ, করেছেন। কিভাবে? চলুন দেখে নেওয়া যাক।

প্রথমেই বলেছি উদ্ভিদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ রাতের অন্ধকারে ঘটে থাকে। উজ্জ্বল আলোর উপস্থিতিতে এই কাজ গুল ব্যাহত হয়। ফলে উদ্ভিদের বৃদ্ধি থেকে শুরু করে ফল দান সহ বিভিন্ন বিষয়ে এর প্রভাব পরে।

এবার ভাবুন পাখিদের কথা। যেসব পাখি আপনার বাগানে বাসা বেধেছিল তারা আলোকসজ্জার পরে তাদের বাসা খুঁজে পেতে বিভ্রান্ত হবে। সবচেয়ে বড় কথা হল, একটা সময় গিয়ে দেখবেন আপনার বাগানে পাখির সংখ্যা দিন দিন কমতে শুরু করেছে।

যদি কোন নিশাচর প্রাণী থেকে থাকে তাহলে তারা রাতের বেলায় কৃত্রিম আলোয় শিকার করতে বের হবে না। ফলাফল হিসেবে কিছুদিন পর এদের আর দেখতে পাবেন না।

খুব সামান্য কিছু উদাহরণ এখানে বলা হল। এমন আরও অনেক পরিবর্তন আপনি দেখতে পাবেন। কিন্তু প্রায় সবই নেতিবাচক।

কেন? কারণ আপনি আলো দূষণ করেছেন।

কোন স্থানে প্রাকৃতিক আলো ব্যতীত অতিরিক্ত যে কোন কৃত্রিম আলোকসজ্জা ই হল আলো দূষণ। International Dark-Sky Association এর মতে, কৃত্রিম আলোর অনুপযুক্ত বা অতিরিক্ত ব্যবহার ই হল আলো দূষণ। খুব সামান্য আলো হয়ত পরিবেশের তেমন ক্ষতি করে না, কিন্তু রাস্তাঘাটের উজ্জ্বল ল্যাম্পপোষ্ট, কোন বহুতল ভবনের বা বিশেষ স্থানের আলোকসজ্জা ইত্যাদি, পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। আর একেই আমরা আলো দূষণ বলি।

কৃত্রিম আলো বলতে প্রাকৃতিক আলো (চাঁদ ও সূর্যের আলো) ব্যতীত যে কোন আলো কেই বুঝায়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক বাতি যার মধ্যে অন্যতম। রাতের বেলা বিভিন্ন প্রয়োজনে আমরা কৃত্রিম আলো ব্যবহার করে থাকি। সভ্যতার শুরু থেকেই যা আমাদের নিত্য সঙ্গী। কিন্তু বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কারের পর থেকে এই ব্যবহার দিন দিন বেড়েছে ব্যাপক হারে। আমাদের নিত্য দিনের ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের নানান ওয়াটের বাল্ব, টর্চ লাইট,স্ট্রিটল্যাম্প বিল বোর্ড বা গাড়ির হেডলাইট থেকে । তাছাড়া কেরোসিন ও ডিজেল চালিত বিভিন্ন কৃত্রিম উৎস তো আছেই ।

বিভিন্ন প্রকার আলোক দূষণ এবং কারণ

পরিবেশে তিন ধরনের আলো দূষণ রয়েছে এবং এসবের পেছনে রয়েছে বিভিন্ন কারণ। এগুলো হলঃ

১। অতিরিক্ত উজ্জ্বলতাঃ এই আলো দূষণটি ঘটে মূলত কৃত্রিম আলোক উৎসের অপব্যবহার এর ফলে। অপ্রয়োজনীয় এবং অতিরিক্ত কৃত্রিম আলো কোন স্থানে অস্বাভাবিক উজ্জ্বলতা তৈরি করতে পারে। রাস্তাঘাটে ব্যবহৃত ল্যাম্পপোষ্ট বা ফ্লাডলাইট, অপ্রয়োজনীয় আলোকসজ্জা প্রভৃতি কারণে একটি স্থানের উজ্জ্বলতা বেড়ে গিয়ে ওই স্থানের স্বাভাবিক আলোর ভারসাম্য নষ্ট করে। যেমনঃ যুক্তরাষ্ট্রের টাইমস স্কয়ারের মত স্থান।

২। আলোক ঝলকানিঃ এটি হল কৃত্রিম আলোর অতিরিক্ত ঝলকানি যা স্বাভাবিক দর্শনে অস্বস্তির কারণ হতে পারে (উদাহরণস্বরূপ, গাড়ি চালানোর সময়)।

৩। আলোক অনুপ্রবেশঃ এ দূষণ টি হল যখন আলো এমন একটি এলাকায় প্রবেশ করে যেখানে এটি কোন প্রয়োজনে ব্যবহার হয় না (যেমন রাস্তার আলো কাছাকাছি বেডরুমের জানালা আলোকিত করে)।

আলো দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব

আলো দূষণের প্রভাব গুলো মোটেও হালকা ভাবে নেওয়ার উপায় নেই। পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের উপর আলো দূষণের সরাসরি প্রভাব রয়েছে। Nature Study Society of Bangladesh এর তথ্য অনুযায়ী চলুন দেখে নেওয়া যাক আলো দূষণের কিছু ক্ষতিকর প্রভাব।

১। আলো দূষণ মানুষের ঘুমের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। আমাদের দেহে মেলাটোনিন নামক একটি হরমোন রয়েছে, যা কিনা সরাসরি আমাদের ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। মূলত রাতের আঁধারে আমাদের দেহে এই হরমোন টি নিঃসৃত হয়ে থাকে। এই হরমোন দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও প্রদাহ কমিয়ে দেয়। পর্যাপ্ত পরিমাণের ঘুমের জন্য মেলাটোনিন নিঃসরণ প্রয়োজনে ।

কিন্তু আলো দূষণে মেলাটোনিন নিঃসরণে ব্যাঘাত ঘটে। রাতের বেলায় আমরা যে কৃত্রিম আলো ব্যবহার করি বিশেষ করে নীল আলোর এল ই ডি লাইটের উপস্থিতিতে মেলাটোনিন নিঃসরণ কমে যায়। ফলে ধীরে ধীরে আমাদের ঘুমের সমস্যা শুরু হতে থাকে। অনিদ্রা, মাথাব্যথা, অবসাদ, চিন্তা, মানসিক অশান্তি প্রভৃতি সমস্যা গুলো ক্রমান্বয়ে দেখা দিতে শুরু করে।

২। বর্তমানে স্তনক্যান্সার নারীদের একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাধি। আর এই স্তনক্যান্সারের একটি অন্যতম কারণ হল মেলাটোনিনের নিঃসরণ কমে যাওয়া। তাই কৃত্রিম আলোর আধিক্যতার কারণে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনিস্টিউট ও ন্যাশনাল ইনিস্টিউট অফ ইনভাইরনমেন্টাল হেলথ সার্ভিস এর এক জরীপে দেখানো হয় যে, রাতের কৃত্রিম আলো স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী। আর এ কারণে নাইট শিফট এ যে সকল নারীরা কাজ করেন তাদের স্তনক্যান্সার এর ঝুঁকি বেশি থাকে।

৩। উদ্ভিদের খাদ্য তৈরি থেকে বিভিন্ন শারীরবৃত্ত কাজের উপর সরাসরি আলো এবং অন্ধকারের উপস্থিতির প্রভাব থাকে। আলো দূষণের কারণে রাতের বেলাতেও উদ্ভিদের স্টোমাটা সারারাত খোলা থাকছে। এতে করে উদ্ভিদ তার প্রয়োজনীয় রস বাষ্প আকারে হারাচ্ছে। ফলে পাতা হয়ে পড়ছে বিবর্ণ।

৪। আমরা জানি যে বিভিন্ন মৌসুমী উদ্ভিদের ফুল ও ফল দান দিন ও রাতের দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করে, সহজ কথায় আলো ও অন্ধকারের স্থায়িত্বের উপর নির্ভর করে। কিন্তু আলো দূষণে কৃত্রিম আলোর পরিমাণ ও উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ার ফলে অন্ধকার সময়ের দৈর্ঘ্য আর দিনের আলোর দৈর্ঘ্যের পরিমাণের তারতম্য হচ্ছে। ফলে উদ্ভিদের ফুল ও ফল উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটছে।

৫। অনেক উদ্ভিদ আছে যাদের রাতের বেলায় পরাগায়ন ঘটে। রাতের অন্ধকারে বিভিন্ন পতঙ্গরা ফুলে ফুলে ঘুরে পরাগায়ন করে থাকে। কৃত্রিম আলোর উপস্থিতি এ সকল পতঙ্গদের রাতে চলাফেরার ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। যা কিনা উদ্ভিদের পরাগায়নও কমিয়ে দিচ্ছে।

৬। রাস্তার ল্যাম্প পোস্ট-এ যে আলো জ্বলে তা থেকে ক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের অতি বেগুনী রশ্মি বের হয়, যা ছোট পোকামাকড় এর জিনগত পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। আলোর প্রভাবে কোষের ভিতরে ডিএনএ-এর মধ্যে থাইমিন নামক যে যৌগ থাকে তা পরিবর্তন করে দেয়, যার ফলে ডিএনএ তে পরিবর্তন আসে। এতে তাদের মৌলিক বৈশিষ্ট্য যেমন গায়ের রঙ চোখের রঙ ইত্যাদির পরিবর্তন আসতে পারে। এমনকি প্রজনন ক্ষমতাও হ্রাস পায়।

৭। আমরা জানি যে জোনাকি পোকা কিভাবে আলো জ্বেলে থাকে। তবে জোনাকি পোকা এই আলো কিন্তু এমনি এমনিই জ্বালে না। এর পেছনে রয়েছে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্দেশ্য, তা হল বংশ বিস্তার। জোনাকি পোকা আলো জ্বেলে বিপরীত লিঙ্গের জোনাকিদের আকর্ষণ করে বা বিপরীত লিঙ্গের আবেদনে সারা দেয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে অধিক হারে আলোক দূষণ জোনাকি পোকার বংশবিস্তারের এই প্রক্রিয়া কে বাধাগ্রস্ত করেছে। রাতের বেলায় কৃত্রিম আলোর প্রভাবে তাদের তৈরি আলো সঙ্গীর কাছে পৌঁছাতে পারছে না। ফলে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে জোনাকির প্রজননের হার এবং তাদের সংখ্যা।

৮। সামুদ্রিক কচ্ছপের উপর আলোক দূষণের প্রভাব আরও মারাত্মক। সামুদ্রিক কচ্ছপরা অধিকাংশ সময় সমুদ্রে থাকলেও প্রজননের সময়ে সমুদ্র পাড়ে ডিম পাড়তে আসে। যখন রাতের বেলায় ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় চাঁদের আলোয় রাতের আকাশের উজ্জ্বলতা আর সমুদ্রের অন্ধকারাচ্ছন্নতার উপর নির্ভর করে বাচ্চা কচ্ছপ সমুদ্রের দিক নির্ণয় করে। কৃত্রিম আলোর আকর্ষণে ভুল পথে চলে আসে বাচ্চা কচ্ছপ। ফলে কোনোদিন সমুদ্রের দেখা পায় না, মারা যাচ্ছে অনেক কচ্ছপের বাচ্চা।

বাসা বাধা কিংবা ডিমপাড়ার জন্য মা কচ্ছপ অন্ধকারময় তীরে আসে, আলোকিত জায়গা এড়িয়ে চলে। যে সকল সমুদ্রতীরে কৃত্রিম আলো বা শহর রয়েছে সেসব সমুদ্রতীরে কচ্ছপরা বাসা বাধতে ও ডিম পাড়তে বাঁধাগ্রস্ত হয়।

৯। পাখিদের উপরে আলো দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব শুরুতেই কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। তবে এটুকুই শেষ নয়। মার্কিন পাখি বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন গবেষণা চালিয়ে দেখতে পান যে আলোর প্রভাবে উত্তর আমেরিকায় প্রায় ২০০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি তাদের গতিপথ পরিবর্তন এনেছে। বিশ্বব্যাপী ৫৬ প্রজাতির Petrel পাখি আলো দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাদের ব্যবহার ও বৈচিত্র্যের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।

১০। উভচর এবং সরীসৃপ দের মাঝেও আলোদূষণের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। কিছু প্রজাতির ব্যাঙ ও সালামান্ডার আলোর উপর নির্ভর করে দিকনির্ণয় করে চলাচল করে। অন্ধকারে কৃত্রিম আলো মেলাটোনিন নিঃসৃত হওয়ার পরিমাণের উপর প্রভাব ফেলে। মেলাটোনিন এক প্রকার আলোকসংবেদনশীল হরমোন যা প্রাণীর আচার-আচরণ এর উপর ভূমিকা থাকে। এ ছাড়াও এসব প্রাণী গভীর রাতে কিংবা ভোরের দিকে শিকারে বের হয়। কৃত্রিম আলোর ফলে এদের শিকার ব্যাহত হয়। তা ছাড়াও কৃত্রিম আলো চোখের রেটিনার ক্ষতি, স্পার্ম উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া এমনকি জেনেটিক মিউটেশনও ঘটাতে পারে।

১১। সমুদ্রের নীচে বসবাসকারী অনেক প্রাণী কৃত্রিম আলো দ্বারা প্রভাবিত হয়। বেশিরভাগ মাছ ই সাদা আলো এড়িয়ে চলে। Menai Strait এ এক জরিপ থেকে দেখা যায় যে গুগলি জাতীয় শামুক (barnacle) জাহাজ বা বন্দর থেকে ভেসে আসা কৃত্রিম আলো দ্বারা আকর্ষিত হয়। যা প্রায় ৩০৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের ক্ষতিসাধন করে থাকে।

১২। ক্ষুদ্রাকৃতির প্রাণী জুপ্লাংটন দিনের বেলায় পানির গভীর স্তরে থাকে, রাতের বেলা উপরের স্তরে উঠে আসে এলজি খাওয়ার জন্য। কৃত্রিম আলোর উপস্থিতি উপরের স্তরে উঠে আসতে বাধা গ্রস্ত করে, অন্যদিকে এলজির সংখ্যা বহুগুনে বেড়ে যায়, ফলে জলজ পরিবেশ ভারসাম্য হারায়। সামুদ্রিক কোরাল অমাবস্যা পূর্ণিমার উপর নির্ভর করে ডিম দেয়। যদি চাঁদের আলো কৃত্রিম আলো দ্বারা প্রভাবিত হয়, তাহলে সঠিক সময়ে ডিম দিতে পারে না, ফলে বংশ বিস্তার ব্যাহত হয়।

বেশিরভাগ শহরে এখন আর পরিস্কার আকাশেও ভালভাবে তারা দেখা যায় না। আলো দূষণের কারণে রাতের বেলাতেও উজ্জ্বল হয়ে থাকছে আমাদের বায়ুমণ্ডল। এমন উজ্জ্বল আলোর আভায় আকাশের অনিন্দ্য সৌন্দর্য্যের খুব সামান্যই আমরা উপভোগ করতে পারছি। শহুরে অনেক শিশুরই মিল্কিওয়ে দেখার সৌভাগ্য হয় না বা হবে না।

আলো দূষণকে আমরা যতটা হালকাভাবে দেখি এটি ততটা এড়িয়ে যাওয়ার মত বিষয় নয়। এর প্রভাব গুলো কিছুটা ধীর গতির হওয়ায় আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অতটা গুরুত্বের সাথে নেই না। কিন্তু ক্ষতিকর প্রভাবের দিক দিয়ে এটি কোন অংশেই অন্যান্য দূষণের দিক দিয়ে কম নয়। আমরা সচেতন না হলে অদূর ভবিষ্যতে অনেক ভয়াবহ বিপদে সম্মুখীন হতে হবে।

আলো ও শব্দদূষণ নীরব ঘাতক

আলো ও শব্দদূষণ নীরব ঘাতক

 



আলো দূষণ ও শব্দদূষণ নিয়ে আলোচনা একেবারেই কম। কিন্তু এ দুটো দূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য নীরব ঘাতক। উন্নয়নের গতির সঙ্গে সঙ্গে এ দূষণ বাড়ছে। মানুষ্যসৃষ্ট কারণেই ফলাফল ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় কারণে বৃদ্ধির হার ত্বরান্বিত হচ্ছে। অধিক ভোগ-বিলাসিতার জন্য আলো দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। শিল্পায়নের সঙ্গে সঙ্গে শব্দদূষণের মাত্রা ঊর্ধ্বমুখী। আলো দূষণ উন্নত বিশ্বে বেশি।

শব্দ প্রাণিকুলের অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু এর সীমা থাকা দরকার, যা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ৬০ ডেসিবল (শব্দের নিম্নতম পরিমাপক) সাময়িকভাবে শ্রবণশক্তি নষ্ট করে দেয় আর ১০০ ডেসিবেল শব্দ হলে চিরতরে শ্রবণশক্তি নষ্ট হতে পারে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, রাজধানী ঢাকার অনেক স্থানে ১০৭ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ থাকে বা আছে। আল্লাহ মনে হয় আমাদের সহ্যক্ষমতা বেশিই দিয়েছেন! প্রতিনিয়ত ভেজাল খাদ্য খেয়ে সহ্যক্ষমতা মনে হয় বেড়েই গেছে। না হলে শব্দদূষণে আরো ক্ষয়ক্ষতির হার বেড়ে যেত। শব্দদূষণের সঙ্গে বধিরতার সম্পর্ক রয়েছে। আকস্মিক তীব্রশব্দ কানের ভয়াবহ ক্ষতি করে। সম্পূর্ণ বধিরও করতে পারে। আমাদের যানবাহন ও শিল্প-কারখানা থেকে ভয়াবহ শব্দদূষণ হয়। শব্দদূষণের ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি, হৃদরোগ, মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়া রোগ হয়ে থাকে। এ ছাড়া শ্বাসকষ্ট, মাথাধরা, বমি বমি ভাব ও মানসিক অস্বাভাবিবকতা হতে পারে। একটানা গাড়ির শব্দ বা উচ্চশব্দ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। পুরো ঢাকা শহরটাই এখন ভয়াবহ শব্দদূষণের শিকার। রাজধানীর সব এলাকায় শব্দ সহ্যসীমার অনেক বেশি রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গ্রহণমাত্রার দ্বিগুণ বা তিন গুণ পর্যন্ত রয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ঢাকার এক-তৃতীয়াংশ লোকের শ্রবণশক্তি কমে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬-এ বলা হয়েছে, শব্দদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব ও ক্ষতিকরের হাত থেকে সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলা আছে। এ আইনে বলা আছে, প্রতি ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন বা নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কী কী করবে। এসব কর্তৃপক্ষের কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন এলাকা শনাক্ত করতে হবে। যেমন নীরব এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, মিশ্র এলাকা, শিল্প এলাকা, আবাসিক এলাকা প্রভৃতি। নীরব এলাকায় থাকবে হাসপাতাল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, স্কুল প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত হবে। ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, লিফলেট ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণকে সজাগ করার কথা বলা আছে। এসব থাকলে জনগণ কোথায় কী করতে হবে জানবে। কিন্তু এই আইন সম্পর্কে তেমন কোনো প্রচার নেই। এ আইন বাস্তবায়ন করলে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

আইনের প্রচার ও বাস্তবায়ন, সচেতনতা সৃষ্টি, হর্ন বাজানো থেকে বিরত, জেনারেটর ও যন্ত্রপাতির শব্দ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা করতে হবে বা রাখতে হবে। হাইড্রোলিক হর্ন বাজানোর ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনা আছে, যা কঠোর বাস্তবায়ন করতে হবে। শিল্প এলাকায় কম শব্দ উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে হবে। যন্ত্রপাতিগুলো নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে। সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যথাসম্ভব মাইকের ব্যবহার কম করতে হবে। এড়িয়ে চলতে পারলে খুব ভালো হবে। না হলে কম শব্দ সৃষ্টি করে এমন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে। জাপানিরা বা উন্নত দেশের লোকরা কথা কম বলেন। কাজ বেশি করেন। প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেন না। আমরা ধীরে ধীরে এ সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারি। এদিকে কৃত্রিম আলোতে বিশ্ব ভরে গেছে। বাংলাদেশও ভরে যাচ্ছে। শহরে রাত আর দিনের পার্থক্য করা মুশকিল হয়ে পড়ে অনেক সময়। অনেক শহর কৃত্রিম আলোয় দিনের ফ্লেভার পায়। উন্নত দেশের বেশির ভাগ শহর তো এ রকমই। কায়রোকে তো বাজারের শহর বলা হয়। রাতের বেলায় জাঁকজমক বেশি হয়। বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলো এমনকি জেলা বা মফস্বলের অনেক শহরে আলোর খেলা চলে রাতে। কসমেটিক বা বিপণিকেন্দ্রগুলোয় রাতেই উপচে পড়া ভিড় হয়। কর্মব্যস্ত মানুষ রাতেই বাজার বা মার্কেট করতে চাই। বাচ্চারাও কৃত্রিম আলোর নাচুনিতে মুগ্ধ হয়ে অভিভাবকদের বাইরে যাওয়ার জন্য প্রভাবিত করে। এ সংখ্যা এখন বেড়েই চলেছে।

দেখা যায়, অনেক শহরে দিনের আলোর চেয়ে রাতে কৃত্রিম আলোয় আকাশ জ্বলজ্বল করে। রাতের বেলা আকাশ বা গ্রহ-তারা কৃত্রিম আলোকচ্ছটায় পরিষ্কার দেখা যায় না। লোকালয়ের অনেক দূরে দেখতে যেতে হয়। তখনই আমরা ধরে নেব আলোক দূষণ চরম মাত্রায়। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিশ্বের ৮৩ শতাংশ শহর আলো দূষণের শিকার। আমেরিকার আর ইউরোপের শতভাগ (৯৯ শতাংশ) শহর আলো দূষণের শিকার। কাতার, কুয়েত, সিঙ্গাপুর সবচেয়ে বেশি আলো দূষণের শিকার। আর দক্ষিণ আফ্রিকার সাদসহ দরিদ্রপীড়িত দেশ কম আলো দূষণের শিকার। দেখা যাচ্ছে, উন্নয়নের একই গতিতে আলো দূষণের হার বেড়েই যাচ্ছে। জার্মানির কোলন জ্যোতির্বিজ্ঞানী হ্যারাল্ড বার্ডেন হাগেন পরীক্ষালব্ধ জ্ঞান থেকে বলেছেন, ‘অনেক ক্ষেত্রেই রাতের আলোর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। মানুষের স্বাস্থ্য অন্যদিকে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি। এ ছাড়া রাতের কৃত্রিম আলোর ছটা আকাশের গ্রহ-তারাকেও ম্লান করে দিতে পারে।’ তিনি আরো বলেন, এটা মানুষের ওপরও প্রভাব ফেলে। এটি বডি-ব্লক ওলটপালট করে দিতে পারে। রাতের কৃত্রিম আলোর কারণে স্তন ও প্রস্ট্রেট ক্যানসারের আশঙ্কাও বাড়িয়ে দেয়।

যেসব প্রাণী অন্ধকারে চলাচল করে, তাদের জন্য কৃত্রিম আলো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। বাদুড়, লক্ষ্মীপেঁচা, হুতুমপেঁচা, শিয়াল, বনবিড়াল প্রভৃতি প্রাণীর চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি করে। বংশবিস্তার কমে যায়। সোডিয়াম আলোর কারণে অনেক প্রাণী বাসস্থানের পরিবেশ নষ্ট হয়। অন্ধকারে চলা বা নিশাচর প্রাণীরা খাদ্যসংকটে পড়ে। পোকামাকর, কীটপতঙ্গের জীবনযাত্রা দিন-রাতের নিয়তির ওপর নির্ভরশীল। ফলে জিববৈচিত্র্য বিপন্ন হয়। এতে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এলইডি প্রযুক্তি আসার পর আলোর ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে। ভিজিবল ইনফ্লায়েড ইমেজিং রেডিওর (ভিআইআইএস) মাধ্যমে দেখা যায়, বাংলাদেশে ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে কৃত্রিম আলোর তীব্রতা বেড়েছে ২ দশমিক ২ শতাংশ পর্যন্ত। এতে ঘুম কেড়ে নিচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাস্তুতন্তে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ঠিক রাখার জন্য অন্ধকার খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক কীটপতঙ্গের খাবারের জোগান উদ্ভিদ থেকেই হয়ে থাকে। অনেক উদ্ভিদের ফুল ফোটে অন্ধকারে। উদ্ভিদ থেকে বিষাক্ত কার্বন-ডাই অক্সাইড নিঃসারণ হয়। পরাগায়ণ হয় রাতের বেলায়। নিশাচর কীটপঙ্গের মাধ্যমে অনেক উদ্ভিদের পরাগায়ণ হয়ে থাকে, যা রাতের বেলায় হয় বা অন্ধকারে হয়। আলোর প্রভাবে প্রকৃতির এই চেইনও বিঘিœত হচ্ছে।

বিশ্বে উৎপাদিত বিদ্যুতের এক-চতুর্থাংশ কৃত্রিম আলো তৈরিতে ব্যবহৃত হয় বলে বিজ্ঞানীরা বলছেন। অতিরিক্ত আলোর এলাকায় বিলবোর্ডের আলোর ঝলকানিতে গাড়ির চালক নিশানা ভুল করতে পারেন। আলোকসংকেত নাও দেখতে পারেন। আমাদের রাজধানীর বা বড় শহরের রাস্তার দুধারে অনেক আলোক বিলবোর্ড আছে। কৃত্রিম আলোর জন্য যে শক্তি ব্যবহার করা হয়, তার ৩০-৬০ ভাগ পর্যন্ত অপচয় হয় বলে জানা যায়। সড়কবাতি, বিলবোর্ড ইত্যাদি ব্যবহারের প্রয়োজনে আলো যাতে কম ছড়ায়, তা খেয়াল রাখতে হবে। অনেক দেশেই আবিষ্কৃত (যেমন জার্মানি) হয়েছে লক্ষ্যবস্তুতে আলোকিত করার বাল্ব। এতে চারদিকে আলো ছড়িয়ে যাবে না। কিন্তু আমাদের অনেক অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য থাকে লোক দেখানো বা জাঁকজমক করা। এতে আলোর অপচয় হবে। আলো দূষিত হবে। সচেতনতাই কেবল পারে আমাদের দেশে শব্দদূষণ ও আলোক দূষণ কমাতে। এ ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে আমরাও এগিয়ে আসব। ব্যর্থ হলে আমাদের ভবিষ্যতের জন্যই খারাপ হবে।