Showing posts with label প্লাস্টিক দূষণ. Show all posts
Showing posts with label প্লাস্টিক দূষণ. Show all posts

Monday, January 31, 2022

পরিবেশের জন্য বড় হুমকি “প্লাস্টিক দূষণ”

পরিবেশের জন্য বড় হুমকি “প্লাস্টিক দূষণ”

 খাবার থেকে শুরু করে ওষুধ, প্রসাধনী অথবা প্রযুক্তিপণ্য প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষ ব্যবহার করছে পরিবেশবিধ্বংসী প্লাস্টিক, যা সমুদ্র ও প্রকৃতিদূষণে মারাত্মকভাবে দায়ী। স্থায়িত্ব, কম খরচ এবং বিভিন্ন আকার ও এর সহজলভ্যতার কারণেই প্লাস্টিকের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। ভোক্তা সমাজ ও উত্পাদনকারীদের মানসিকতা এবং আচরণই এর জন্য দায়ী। প্লাস্টিক অপচনশীল রাসায়নিক দ্রব্য, যা পরিবেশে সহজে মেশে না। তাই পরিবেশের ওপর প্লাস্টিক নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। ব্যবহূত প্লাস্টিক যখন আমরা যেখানে-সেখানে ফেলে দিই তখন সেই প্লাস্টিক চলে যায় ড্রেন, খাল-বিল, নদী-নালা এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে সমুদ্রে। ফলে জীববৈচিত্র্যের ওপরও ফেলছে মারাত্মক প্রভাব।

সাম্প্রতিক বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৩ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক প্রতি বছর সাগরে পতিত হওয়ার ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে সাগরে মাছের তুলনায় প্লাস্টিকের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। আরেক হিসেবে বিশ্ব জুড়ে প্রতি মিনিটে ৩৩ হাজার ৮০০টি বোতল ও ব্যাগ সাগরে গিয়ে পড়ছে। বছরে যার পরিমাণ ৮০ লাখ টন, যা জলজ প্রাণীর জন্য হুমকি। সমুদ্রের ঢেউ এবং সূর্যের আলোর প্রভাবে প্লাস্টিকের পণ্য ধীরে ধীরে টুকরো হয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়। পানি ও অন্যান্য খাদ্যের সঙ্গে একসময় এই মাইক্রোপ্লাস্টিক বিভিন্ন জীবের দেহে প্রবেশ করে। একসময় ফুড চেইন, বিশেষ করে মাছের মাধ্যমে মানুষের শরীরেও প্রবেশ করে, যা মানবদেহে চরম স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটায়। পৃথিবীতে এখন প্রতি বছর মাথাপিছু ৬০ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ এবং জাপানের মতো শিল্পোন্নত দেশগুলোতে এই পরিমাণ মাথাপিছু ১০০ কেজিরও বেশি।

তবে আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় এ পরিমাণ এখনো অনেক কম। বেসরকারি সংস্থা ওয়েস্ট কনসার্নের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মানুষ মাথাপিছু ৩.৫ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার করেছে। আর রিসাইকেলের হার মাত্র ৯.২ শতাংশ। বিশ্বে প্লাস্টিক রিসাইক্লিংয়ের শীর্ষে রয়েছে জাপান। শিল্পকারখানা থেকে শুরু করে গৃহস্থালির ফেলে দেওয়া জিনিসকে কীভাবে পুনর্ব্যবহার করা যায় সেই দিকে তারা খুবই মনোযোগী। সেজন্য তারা আলাদাভাবে ও পরিষ্কারভাবে এসব বর্জ্য সংরক্ষণ করে থাকে। তারা বিশ্বাস করে, মানুষ চাইলেই প্রকৃতির দূষণ বন্ধ করা সম্ভব। কিন্তু ব্যবহার কম হলেও বাংলাদেশের পরিবেশের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব অনেক বেশি। কারণ অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তুলনামূলক খারাপ। ফলে প্লাস্টিক, কাচ, কাগজ, কাপড় বা পচনশীল দ্রব্য আলাদাভাবে ব্যবস্থাপনা না করায় অধিকাংশ প্লাস্টিকের মতো অপচনশীল দ্রব্য মিশছে মাটি ও পানিতে। মানুষের মধ্যে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে সচেতনতা না থাকায় নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট দ্রব্য ফেলার সংস্কৃতি এখনো বাংলাদেশে গড়ে ওঠেনি। ফলে যেখানে-সেখানে ফেলায় নদী-নালা ও খাল-বিলের পানির অবিরাম প্রবাহধারা দেশের অধিকাংশ প্লাস্টিক বয়ে নিয়ে ফেলছে সমুদ্রে।

প্লাস্টিকদূষণ রোধ করার জন্য আমাদের ভোগ, উত্পাদন, ভোক্তা, আচরণ ও রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনায় ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। এখনই সরকারি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে প্লাস্টিকের রিসাইকেলে মনোযোগী হতে হবে। এর বিকল্প ব্যবহারে, যেমন—পলিথিনের ব্যাগের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ, প্লাস্টিকের জগের পরিবর্তে কাচের জগ, সিরামিকের কাপ এবং ঘর-গৃহস্থালিতে বাঁশ, বেত ও কাঠের তৈরি আসবাবপত্র ইত্যাদি ব্যবহারে নিজেকেই গুরুত্ব দিতে হবে, তা না হলে প্লাস্টিকদূষণ রোধ কখনোই সম্ভব হবে না। ফলে ভবিষ্যত্ প্রজন্মের জন্য এই পৃথিবী বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়বে।